পাসপোর্ট কি, পাসপোর্ট করতে কি কি প্রয়োজন এবং পাসপোর্ট হয়েছে কিনা কিভাবে চেক করবেন?
পাসপোর্ট কি?
পাসপোর্ট এক ধরনের ভ্রমণ নথি যা সাধারণ একটি দেশের সরকার কতৃক জারি করা হয়। এটি আন্তর্জাতিক ভ্রমনের ক্ষেত্রে বাহকের জাতীয়তা ও পরিচয় প্রত্যয়িত করে। কোনো দেশের নাগরিক অন্য দেশে ভ্রমণের বা স্থায়ী বা কাজের সন্ধানে পাড়ি জমাতে গেলেই সর্বপ্রথম প্রয়োজন পরে এই পাসপোর্টের। পাসপোর্ট এক দেশের নাগরিক কে অন্য দেশে তার দেশের নাগরিকতা তুলে ধরে।
পাসপোর্ট করতে কি কি প্রয়োজন?
একটি পাসপোর্ট করতে সাধারণত কয়েকটি তথ্যের প্রয়োজন পরে। তা হলো :
- বাহকের নাম
- বাহকের ছবি
- শ্রেণী
- দেশ কোড
- পাসপোর্ট নং
- বংশগত নাম
- প্রদত্ত নাম
- জাতীয়তা
- ব্যক্তিগত নং
- জন্ম তারিখ
- পূর্ববর্তী পাসপোর্ট নং
- লিঙ্গ
- জন্মস্থান
- প্রদানের তারিখ
- প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ
- মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ
- স্বাক্ষর।
বর্তমানে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। ই পাসপোর্ট এর ডাটাবেজে থাকবে পাসপোর্টধারীর তিন ধরণের ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ। ফলে যেকোনো দেশের কর্তৃপক্ষ সহজেই ভ্রমণকারীর সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারবেন।
পাসপোর্ট হয়েছে কিনা কিভাবে চেক করবেন?
- ই-পাসপোর্ট চেক করার জন্য আপনার Google chrome ব্রাউজার থেকে ভিজিট করুন www.epassport.gov.bd সাইটে।
- এরপর check status মেন্যুতে ক্লিক করে Online registration Id অথবা Application Id এবং জন্মতারিখ দিন।
- সবশেষে I’m human লেখার পাশে ঠিক চিহ্ন ক্লিক করে Check বাটনে ক্লিক করে চেক করতে পারবেন পাসপোর্ট হয়েছে কি না।
উল্লেখিত কয়েকটি জিনিস ফলো করেই আপনি খুব সহজে আপনার পাসপোর্ট হয়েছে কিনা তা জানতে পারবেন। যদি পাসপোর্ট তৈরি না হয়ে থাকে তবে আপনি পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা ও জানতে পারবেন সহজে Passport status এর সাহায্যে।
পাসপোর্ট জন্য কিভাবে আবেদন করবেন?
আজ থেকে কয়েক বছর আগেও পাসপোর্ট আবেদন এর জন্য অনেক দূর ঝাঁপ এর প্রয়োজন পরত। বিশেষ পাসপোর্ট অফিস এ যাতায়াত করা আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করা। বিশেষ করে তারা বেশি অসুবিধাই পরত যারা গ্রাম অঞ্চলে বসবাস করত। কিন্তু বর্তমানে খুব সহজে যেখানেই বসবাস হোক না কেন ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায়। কিন্তু অনলাইনে আবেদনের আগে আপনার কয়েকটি বিষয় জেনে নিতে হবে তা হচ্ছেঃ
আপনার জেলায় ই- পাসপোর্ট সেবা প্রদান করে কিনা।আপনার জেলায় ই পাসপোর্ট সুবিধা আছে কিনা। যদি তা নিশ্চিত হোন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক । অনলাইনে আবেদন করতে প্রথমে ভিজিট করুনঃ
- epassport.gov.bd।
- তারপর apply online মেন্যুতে ক্লিক করুন
- তারপর অফিস ও থানা নির্বাচন করতে হবে
- এরপর আপনার ই মেইল ভেরিফিকেশন করে আপনার ব্যক্তিগত
তথ্য ,পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর তথ্য যদি থাকে ঠিকানা,পিতা মাতার তথ্য জরুরি যোগাযোগের ঠিকানা দিয়ে পূরন করুন।
সবশেষে পাসপোর্টের ধরণ , ডেলিভারির ধরণ, সিলেক্ট করে আবেদন সম্পন্ন করুন।
কিভাবে পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করবেন?
পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করতে check E passport মেন্যুতে ক্লিক করুন তার পরবর্তী ধাপ Passport status এ ক্লিক করুন। এই পাসপোর্ট স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে আপনি আপনার পাসপোর্ট এর সকল বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন। পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেকের সময় কয়েকটি অপশন দেওয়া থাকবে যেগুলোর অর্থের সাহায্যে আপনি জানতে পারআেন পাসপোর্ট কোন অবস্থায় আছে।
- Submitted
যদি পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করে সাবমিটেড আসে তাহলে এর দ্বারা বুঝতে হবে আপনার পাসপোর্ট আবেদন ঠিকঠাক ভাবে পাসপোর্ট অফিসে জমা হয়েছে।
- Appointment scheduled
এর দ্বারা কোনো নির্ধারিত সময়কে বুঝায়। যদি স্ট্যাটাস চেকে এটি দেখায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার সাক্ষাতের জন্য পাসপোর্ট অফিস থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করেছে যে সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে পুরায় আপনার পাসপোর্ট আবেদন জমা দিয়ে আসতে হবে।
- Enrolment in process
এটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে আপনার আবেদনকৃত পাসপোর্টের হার্ডকপিটি অফিসে জমা হয়েছে এবং এটির কার্যক্রম চলমান অবস্থায় রয়েছে অথবা চলছে। আবেদনকারীর সকল ডকুমেন্ট সার্ভারে আপলোড করে কাজ চলে এই সময়। তবে এী একটি বিপরীত দিক এই প্রসেস ২-৩ দিন অব্যহতি থাকে। মাঝে মাঝে এই সময় ২-৩ দিনের অধিক ১০ দিন ও হতে পারে।
- Police clearance
নতুন পাসপোর্ট আবেদন করলে পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়। পুলিশের কাছে আবেদনকারীর তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর পরেই পরের ধাপে যাবে৷ এই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আসতে ৩-১০ দিন সময় লাগে। আগের পাসপোর্ট এর কোনো নাম বা তথ্য পরিবর্তন বা সংশোধনের ক্ষেত্রেও এই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর প্রয়োজন পরে।
- Final approved
যদি পাসপোর্ট স্ট্যাটাস যদি এটা হয় তাহলে বুঝতে হবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং রিপোর্ট পজিটিভ। এখন উক্ত পাসপোর্টের ডিরেক্টর বা সহকারী পরিচালক এর চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। এই অনুমোদন ২-৩ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যায়।
- Approved
অনুমোদিত অর্থাৎ উক্ত পাসপোর্ট অফিস ডিরেক্টর এটি প্রিন্টের জন্য অনুমতি দিয়েছে। প্রিন্ট ঢাকা থেকে হয়ে থাকে। এটি হতে ১-৩ দিন সময় লাগে।
- Print Queue
এটি দ্বারা বুঝানো হয় পাসপোর্ট টি প্রিন্টের লাইনে পাঠানো হয়েছে। এবং প্রিন্টের অপেক্ষায় আছে। প্রিন্টের চাপ বেশি থাকলে এটি ১-১০ দিনেরও অধিক দিন সময় লাগে।
- Passport shipped
অর্থাৎ পাসপোর্ট টি আঞ্চলিক অফিসে পাঠানো হয়েছে।
- Passport issued
এর দ্বারা বুঝে নিতে হবে পাসপোর্ট টি ডেলিভারি দেওয়া হয়ে গেছে।
- Basic check clearance
Basic check clearance এর অর্থ আপনার দেওয়া সকল তথ্য সমূহ প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই চলছে। পাসপোর্টের এই স্ট্যাটাসে ২১-৩ দিন সময় লাগতে পারে।
- Backend Verification
পাসপোর্ট আবেদনে ভুল,পূর্বের পাসপোর্টের সাথে অমিল অথবা কোনো তথ্যের অমিল হলে অর্থাৎ এক ব্যক্তির একাধিক স্বাক্ষর, এইআইডি আর জন্মনিবন্ধনে ভিন্ন তথ্য ঠিকানা ইত্যাদি Automatic software এর মাধ্যমে সার্ভারে ডাটার সাথে মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যদি খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয় বা একই ব্যক্তির ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় তবে পাসপোর্ট প্রিটিং থেকেও বাতিল হতে পারে।
তবে এর পরেও বেকেন্ড ভেরিফিকেশনে ২ টি ধাপ রয়েছে
- Sent for rework
এই পাসপোর্টের আবেদনের তথ্যের অমিল বা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সন্তোষজনক নয় যে কারণে এটি পুনরায় কাজের জন্য পাঠানো হয়। এমন অবস্থায় করণয় কাজ হলো পাসপোর্টের ডেলিভারি স্লিপ আর এনআইডি নিয়ে উক্ত পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকের সাথে দেখা করা।
- ABIS clearance
এই পদ্ধতিতে আবেদনকারীর পুনরায় ফিঙ্গার, আইরিশ ইত্যাদির মুখের ছবি ভেরিফাই করা হয়ে থাকে।
- ABIS clearance failed
এই ভেরিফিকেশন তখনই ফেইলড আসে যখন আপনার ফিঙ্গার, আইরিশ,ফেস অন্য কোনো আবেদনকারীর সাথে মিলে যায়। এমন অবস্থায় দ্রুত পাসপোর্ট অফিসে ডিরেক্টর স্যারের সাথে দেখা করুন এবং উনার দেওয়া পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করুন।
- Backend verification
এটি হলো আবেদনকারী সম্পর্কে সর্বশেষ ভেরিফিকেশন। যা ২-৩ দিনের মধ্যে চলে যায়। তবে এই সর্বশেষ ভেরিফিকেশনেও আপনার পাসপোর্ট বিশেষ কোনো কারনে আটকে যেতে পারে।
যদি আটকে যায় তবে দ্রুত পাসপোর্ট অফিসের ডিরেক্টরের সাথে যোগাযোগ করে তার দেওয়া ব্যবস্থা গ্রহন করুন।