ফ্রিল্যান্সিং কি ও কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং অনলাইনে আয় করবেন

ফ্রিল্যান্সিং কি

বর্তমান সময়ে যেকোনো একটি পেশার নির্দিষ্ট সময় হচ্ছে সকাল ৯ তা থেকে বিকাল ৫ টা অবধি। এই সময়ের মধ্যে সবসময় কাজ করতে অনেকের নিজেরদের মধ্যে একটি একঘেয়েমি মনোভাব চলে আসে। এবং কাজের প্রতি অনীহা চলে আসে। তাই যারা স্বাধীন চিন্তা বা মনোভাবের আছে তারা চাই একটি মুক্তপেশার যা নিজেদের সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করবে এবং এই কাজের কোনো জবাবদিহিতা করতে হবেনা। আর এই রুপ মুক্তপেশার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। আর এই ধরনের মুক্তপেশা গুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়ে থাকে। যারা ফ্রিল্যান্সিং করে তাদেরকে ফ্রীল্যাঞ্চার বা মুক্তপেশাজীবী বলে। এই পেশার মাধ্যমে অনেক প্রচলিত চাকরি থেকে বেশি আয় করে থাকেন, তবে তা আপেক্ষিক। এই কাজগুলো ইন্টারনেট ভিত্তিক হওয়াতে এ পেশার মাধ্যমে অনেক দেশি বিদেশি হাজারো ক্লায়েন্টের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটে ।

 

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবেন

ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সকল কিছু জানার পরে আমাদের প্রথম প্রশ্ন সেটা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো ? আর তার সবচেয়ে সহজ সমাধান এবং উত্তর হল আপনার দক্ষতা। আপনি আপনার দক্ষতা কে কাজে লাগিয়ে সহজে ফ্রিল্যান্সিং আয়ত্ত করা সম্ভব। আপনি ইন্টারনেট ভিত্তিক যে কাজে অনেক বেশি দক্ষ সেই বিষয়ের উপর ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে শিখতে পারেন অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে যেখানে নিজে পড়াশুনা করে শিখতে পারেন। এছাড়া ও বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য বহু ইন্সিটিউট রয়েছে যেখানে আপনি নিজের দক্ষতাকে আর ভালভাবে যাচাই বাচাই করে আরও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবেন। এবং যে কাজে দক্ষতা অর্জন করে সে পেশায় নিয়োজিত হতে পারবেন। তবে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আপনার সেই সাইটে কাজ এবং কিছু বেসিক ধারনা থাকতে হবে।
যেমন

  • পিসি বা ল্যাপটপ অন অফ করা
  • অফিস এম এস ওয়ার্ড /এক্সেল সম্পর্কে ধারনা
  • টাইপিং
  • ইন্টারনেট ওয়ার্ল্ড
  • কীবোর্ড শর্টকার্ট
  • সার্চ ইঞ্জিন
  • নোটপ্যাড
  • ডাউনলোডিং
  • মজিলা ফায়ারফক্স
  • ডোমেইন
  • জিপ ফাইল
  • হোস্টিং

উল্লেখিত বেসিক ধারণা থাকলে নিচের লিস্ট থেকে যেকোন একটা কাজ শিখা শুরু করতে পারেন। এবং সেই কাজে দক্ষতা অর্জন করে আপনি কাজের জন্য বিড করে বা নিজের মার্কেটিং করে, আপনার জানা কাজের ক্লায়েন্টের কাজে মার্কেটিং করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কি কি কাজ শেখা যায়:

  • গ্রাফিক্স ডিজাইন
  • কন্টেন্ট রাইটিং
  • আর্টিক্যাল রাইটিং
  • ডাটা এন্ট্রি
  • ওয়েব ডেভলপমেন্ট
  • সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
  • সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
  • ব্লগ
  • এফ্যালিয়াট মার্কেটিং
  • এডসেন্স
  • থিম বা প্লাগিন তৈরি করে বিক্রি করা।
  • সিপিএ মার্কেটিং এন্ড অ্যাফিলিয়্যাটিং
  • ফেসবুক মার্কেটিং
  • লিঙ্কডিন মার্কেটিং
  • টুইটার মার্কেটিং
  • ইউটিউব মার্কেটিং
  • অ্যামাজন এসইও

এই বিষয় গুলো আপনি খুব সহজে গুগল বা ইউটিউব থেকে সার্চ করে করে শিখে নিতে পারবেন। আপনি এই ধারণা গুলো সম্পর্কে যত বেশি পরিপক্ষতা অর্জন করবেন। আপনার ফ্রিল্যাঞ্চিং এর ব্যাপারে তত বেশি এগিয়ে থাকা সম্ভব হবে। তবে এই লিস্টের উল্লেখিত বিষয় গুলো যদি আপনার জানা না থাকে আপনি খুব বেশি দূরে এগিয়ে যেতে পারবেন না। তাই ফ্রিল্যান্সিং এ যেকোনো বিষয়ে কাজ শুরু করার আগে অবশ্যই এই সব ধারণা আয়ত্ত করে কাজ শুরু বা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত।

বর্তমান সময়ে উপরে উল্লেখিত প্রতিটি কাজই খুব চাহিদা সম্পন্ন। তবে অনলাইন জগত খুবই এগিয়ে এবং প্রতি সময় আপডেট হচ্ছে। তাই যেকোনো এক বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ থাকলে চলবেনা নিজেকে সময়ের সাথে সাথে আপডেট রাখতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কি কি দক্ষতার প্রয়োজন

একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে গেলে সব কিছুর পাশাপাশি আরেকটি যোগ্যতার প্রয়োজন সেটা হলো ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা। কারণ এখানে বেশিরভাগ ক্লায়েন্ট থাকবে বিদেশী তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার্থে এবং ক্লায়েন্ট কি চায় তা বুঝার জন্য এই বিষয়ে ভালো দক্ষতা প্রয়োজন।

ফ্রিল্যান্সিং শিখার জন্য কোন কোন বিষয়ে রিসার্চ প্রয়োজন ?

ফ্রিল্যান্সিং এ মোটামুটি লেখালেখি, ডেটা এন্ট্রি , প্রোগ্রামিং, মার্কেটিং টাইপিং, ডিজাইনিং, এডিটিং সহ অনেক কাজ রয়েছে তবে ফ্রিল্যাঞ্চিং শিখতে হলে আপনার মোটামুটি সেই সাইটে সব বিষয়ে ধারণা থাকা প্রয়োজন। পরবর্তী তে আপনি কোন কাজে দক্ষ এবং কোন কাজ দিয়ে আপনার পেশা অর্জন করতে চান সেই বিষয়ের উপর রিসার্চ করতে হবে।

কোথায় করবেন এই রিসার্চ?

একসময় অনলাইনে এই সব বিষয় খুব একটা রিসোর্চ পাওয়া যেত না, আর যা ইউটিউবে পাওয়া যেত তা আমরা ইন্টারনেটের স্পীড সমস্যার জন্য আমরা এইসব টিউটোরিয়াল থেকে খুব কমই শিখতে পারতাম। কিন্তু বর্তমানে শুধু ইউটিউবের ই সহজলভ্যতা হয়নি, প্রচুর রিসোর্চ তৈরি হয়েছে ব্লগে এবং ইউটিউবে। এমন কি শুধু বাংলা ভাষার টিউটোরিয়াল গুলো দিয়েই আপনি বেসিক থেকে এডভান্স লেভেলের কাজ আপনি শিখতে পারবেন, এই সব আপনি গুগুল বা ইউটিউবে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত টাকা খরচ হয়

ফ্রিল্যান্সিং শেখার আসলে নির্দিষ্ট কোনো খরচ নেই কারণ ফ্রিল্যান্সিং যদি আপনি নিজের চেষ্টাই যেমন পড়াশুনা করে শিখেন বা ইউটিউবে টিউটোরিয়াল মাধ্যমে শিখেন তাহলে কোনো খরচ নেই। শুধু প্রয়োজন ল্যাপটপ ,পিসি কিংবা মোবাইল ফোন ।কিন্তু আপনি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে শিখেন তাহলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কোর্স ভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন খরচ হয়ে থাকে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ৪হাজার- ৬হাজার আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ৮হাজার-১০হাজার অবধি খরচ হয়।তাই নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না যে কত টাকা লাগবে।

নিজের প্রোফাইল কিংবা পোর্টফলিও

আপনি যে কাজ করলেন কিংবা কাজ শিখলেন এগুলো কোথায় প্রেজেন্ট করবেন? বা কিভাবে নিজের কাজকে তুলে ধরবেন? বা ক্লায়েন্ট আপনাকে কিভাবে খুঁজে পাবে? এমন নানান প্রশ্ন সহজেই মনে ধরা দেওয়ার কথা তাই সব কিছুর উত্তর একটাই আপনি যেই সেক্টরে কাজ করছেন বা শিখছেন তার পাশাপাশি নিজের একটা প্রোফাইল বানানো শিখুন। এবং প্রতি সেক্টরে বানিয়ে রাখুন। এতে করে আপনি পরিচিত লাভ করবেন এবং যারা আপনাকে কাজ দিতে চাইবে তারা আপনাকে সহজে খুঁজে পাবে কাজ দেওয়ার জন্য। অনলাইনে ক্যারিয়ারে সফলতা অর্জনের জন্য অবশ্যই নিজের একটা প্রোফাইল বা পোর্টফলিও অত্যবশক। তবে এই পোর্টফলিও বানানোর জন্য আপানকে ডোমেইন হোস্টিং কিনতে হবে যার জন্য ১৫০০-২০০০হাজার খরচ করতে হবে প্রতি বছর মাত্র।

ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে কত টাকা আয় করা যায়

প্রতিটা কাজের শুরুতে বেতন বা আয় কম থাকা টা স্বাভাবিক । আস্তে আস্তে যত দিন যায় তত অভিজ্ঞতা বাড়ে এবং আয় বা বেতনের পরিমান ও বাড়ে। ফ্রিল্যান্সিং টাও এমনি এই কাজের শুরুতে হয়তো মাসে $১০০-$১৫০ আয় হবে।কাজের সাথে সাথে এটি নির্ভর করে আপনি কতক্ষণ এই কাজে সময় দিচ্ছেন এবং আপনার কাজ কতটা নিখুঁত। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং এর একটি বিশেষত্ব এটি অনেক পরিশ্রম , ধৈর্য সহকারে এই কাজ চালিয়ে যেতে হয়। কাজ করতে করতে নিজেরও একটি অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে। এবং অভিজ্ঞতার সাথে সাথে বেতন বা আয় বৃদ্ধি পায় সেই সাথে কাজের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকের কাজের ও অনেক চাহিদা থাকে। তাই শুরুতে অল্প বেতন বা আয় নিয়ে হা হুতাশ না করে বরং এই কাজের প্রতি সময় বাড়িয়ে দিলে তা এক সময় ৭০-৮০ হাজার টাকা অনায়াসে ইনকাম সম্ভব ।

ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য মার্কেটপ্লেস

শিখার মধ্যে সব দিক দিয়ে যদি মনে হই আপনি এখন কাজের জন্য পুরোপুরি তৈরি তাহলে মার্কেট প্লেসে আসুন। যাচাই বাচাই করে দেখুন আপনার কাজের মধ্যে কোনো ঘাটতি আছে কিনা যদি থাকে তা পূরণ করে তারপর কাজ খুঁজুন। বর্তমানে প্রচলিত কিছু মার্কেট প্লেস এর মধ্যে
Fiver.com
Upwork
peopleperhour.com
freelancer.com
কাজের জন্য বেশ জনপ্রিয়।

ফ্রিল্যান্সিং এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

ফ্রিল্যান্সিং মূলত এমন একটি কাজ যা আপনি ইন্টারনেট এর সাহায্যে বিভিন্ন দেশের কোম্পানির সাথে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। বর্তমানে অনলাইনে ভিত্তিক কাজের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে যেকোনো কাজ অনলাইনে সহজে করার কারণে বড় বড় প্রতিষ্ঠান গুলো সরাসরি কর্মকর্তা নিয়োগ না দিতে চাইনা। এক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।তাই এই সেক্টরে আপনার কাজের দক্ষতা থাকলে সেটা কাজে লাগিয়ে নিজের একটা জায়গা করে নিতে পারেন। এবং ভবিষ্যৎ এর জন্য দুশ্চিন্তা মূক্ত থাকতে পারেন।