ব্যাটল অফ ইসমাইলিয়া (পর্ব-১) : ইসরাইল-মিশরের ভয়াবহ যুদ্ধ
অক্টোবর মাস, ১৯৭৩ সাল। শুরু হয়েছে চতুর্থ আরব-ইসরাইল যুদ্ধ। ইতিহাসে এটি Yom Kippur War বা Ramadan War নামেও পরিচিত। ব্যাটল অফ ইসমাইলিয়া এই যুদ্ধেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মূল ঘটনায় যাওয়ার আগে একটু পিছনে ফিরে যাওয়া যাক। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে সিনাই উপত্যকা ও গোলান মালভূমির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ক্ষিপ্ত ছিল মিশর ও সিরিয়া। তারাই এবার ইসরাইলি ইহুদীদের ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইয়োম কিপুর দিনে হামলা শুরু করে।
তখন ছিল রমজান মাস। ইসরাইলের ধারণাই ছিল না যে আরব মুসলিমরা পবিত্র মাসে যুদ্ধ শুরু করবে। যার ফলে ৬ অক্টোবর, ১৯৭৩ সালে মিশর-সিরিয়ার ‘অপারেশন বদর’ এর সারপ্রাইজ এট্যাকে ইসরাইল শুরুতেই বেকায়দায় পড়ে যায়। কিন্তু দ্রুতই প্রতিক্রিয়া দেখায় ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। সিনাইতে তারা মিশরীয়দের অগ্রগতি রোধ করতে সক্ষম হয়। এই যুদ্ধে মিশর ও সিরিয়া মিত্র হলেও তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। মিশর চাচ্ছিলো জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের আগেই সুয়েজ খালের পূর্বপাড়ে যত বেশি সংখ্যক ইসরাইলিদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা নিজেদের দখলে আনা যেন যুদ্ধের পর ইসরাইলের সাথে আলোচনার টেবিলে বসলে সেগুলো দেখিয়ে পুরো সিনাই ফেরত পাওয়া যায়। অন্য দিকে সিরিয়ার লক্ষ্য ছিল যুদ্ধ করে সিনাই ও গোলান মালভূমি সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করা। সিরিয়া একার শক্তিতে গোলান মালভূমি উদ্ধার করতে সক্ষম ছিল না। এই যুদ্ধে এক্সপেডিশনারী ফোর্স হিসেবে সৌদি আরব, মরক্কো, আলজেরিয়া, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, ইরাক, তিউনিশিয়া এবং কিউবা সেনা পাঠিয়ে অংশ নিয়েছিল। বরাবরের মতো ইসরাইলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বিপুল পরিমাণ সামরিক সাহায্য প্রেরণ করে। অপরদিকে আরব দেশগুলোকে সাহায্য করে সোভিয়েত ইউনিয়ন।
মিশর যেন সুয়েজ খাল অতিক্রম করে আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য বারলেভ লাইন নামক এক দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল ইসরাইল। সুয়েজ খালের তীর ঘেষে ১৫০ কি.মি এরিয়া জুড়ে নির্মিত হয়েছিল ২৫ মিটারের উঁচু বালির দেওয়াল। এর সাথে ছিল মোট ২২টি দূর্গ ও ৩৫টি স্ট্রংপয়েন্ট বাংকার। ইসরাইলি জেনারেলদের ধারণা ছিল সাধারণ যুদ্ধে এটির পতন ঘটাতে কমপক্ষে ৪৮ ঘন্টা লাগবে যা ইসরাইলিদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার যথেষ্ট সময় দিবে।
কিন্তু ‘বাকি জাকি ইউসুফ’ নামের এক তরুণ মিশরীয় মেজরের অভিনব পদ্ধতিতে পানির মোটর ও পাইপ দিয়ে মাত্র দুই ঘন্টায় সেটির পতন ঘটিয়ে ঝড়ের বেগে ঢুকে পড়ে মিশরের সেনাবাহিনী। পরবর্তী তিনদিন ব্যাপক যুদ্ধের পর পরিকল্পনা মোতাবেক আশানুরূপ এলাকা দখলে নিতে সক্ষম হয় তারা। দেশটি যখন আক্রমণ থামিয়ে দখলকৃত এলাকায় ডিফেন্সিভ পজিশন জোরদার করছে তখন গোলান মালভূমিতে আক্রমণ করা সিরিয়ান বাহিনীকে পর্যদুস্ত করে তাদেরকে যুদ্ধ শুরুর আগের অবস্থানে পুশব্যাকে বাধ্য করে ইসরাইল। তারপর তারা চারদিন ব্যাপী কাউন্টার অফেন্সিভ অপারেশন চালিয়ে সিরিয়ার আরো ভিতরে ঢুকে পড়ে।
মিশর দেখলো যে তাদের প্রধান মিত্রের অবস্থা শোচনীয়। তাই প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত তার জেনারেলদের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও পুনরায় আক্রমণ করে সিনাই উপত্যকার আরো এলাকা দখলে নেয়ার নির্দেশ দেন। তার ধারণা ছিল ইসরাইল সেনাবাহিনীকে ব্যস্ত রাখতে পারলে মিত্র সিরিয়ার উপর দিয়ে চাপ কম পড়বে।
কিন্তু জেনারেলদের ধারণা ছিল ইসরাইল এতক্ষণে আরো শক্তি সঞ্চয় করেছে। আক্রমণ থামিয়ে দিয়ে আবার আক্রমণ করাটা বোকামি। শেষ পর্যন্ত জেনারেলদের আশঙ্কাই সত্যি হলো। ১৪ অক্টোবরের দ্বিতীয় দফার আক্রমণ তো ঠেকিয়েছিলই এমনকি পাল্টা আক্রমণে সুয়েজ খাল পাড়ি দিয়ে মিশরের ভিতর ঢুকে পড়ে। অর্থাৎ মিশর-ইসরাইল এখন পরস্পর পরস্পরের জমি দখল করেছে!! এরই পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত হয় ইসমাইলিয়া যুদ্ধ যাতে কৃতিত্ব দেখায় মিশরীয় প্যারাট্রুপার ও কমান্ডোগণ।
দ্বিতীয় দফা অফেন্সিভের আগে হেলিকপ্টারে করে সিনাই উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলে কমান্ডো পাঠানোর চেষ্টা করেছিল মিশর। তাদের টার্গেট ছিল ছোট ছোট এলাকা সেনাদের দখলে রেখে শত্রুর উপর চাপ সৃষ্টি করা যা সামরিক ভাষায় ‘পকেট রেজিস্ট্যান্স’ নামে পরিচিত। কিন্তু ইসরাইল বেশ কিছু সেনাবহনকারী হেলিকপ্টার ভূপাতিত করে এই পরিকল্পনা বানচাল করে দেয়। ফলে বাদ বাকি প্যারাট্রুপার ও কমান্ডোগণ সুয়েজ খালের ওপারেই অলস বসে ছিল।
যুদ্ধের কারণ :
১৯৭৩ সালের ১৮ থেকে ২২ অক্টোবর সুয়েজ খালের পশ্চিম প্রান্তে ইসমাইলিয়া শহরের দক্ষিণ দিকে এই যুদ্ধটি শুরু হয়। আগেই বলেছিলাম যে ইসরাইল এবার নিজেদের দখলকৃত শত্রু সেনা থাকা অবস্থায়ই শত্রুদেশে কাউন্টার অফেন্সিভ অপারেশন শুরু করে। অপারেশন আবিরে-লেভ নামক এই মিশনের মূল লক্ষ্য ছিল ইসমাইলিয়া শহর অবরোধ করে সুয়েজ খালের ওপাড়ে থাকা মিশরের সেকেন্ড ফিল্ড আর্মির রসদ সাপ্লাই লাইন বন্ধ করে দেয়া।
ফলে যুদ্ধ ছাড়াই তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে এবং আরো মিশরীয় জমি ইসরাইলের দখলে যাবে। রীতিমতো বিশাল ট্যাংক বহর নিয়ে এই অপারেশন শুরু করে ইসরাইল। মিশরীয় জেনারেলরা শত্রুর পক্ষ থেকে এধরনের জবাব আশা করেনি। মোট সাড়ে ছয় লাখ মিশরীয় সেনার মধ্যে দুই লাখ সেনা তখন সুয়েজ খালের ওপারে। মোট ১৭০০ ট্যাংকের মধ্যে ১০২০টি তখন সুয়েজ খালের ওপাড়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। হটাৎ আক্রমণে ইসমাইলিয়াতে দ্রুত সেনা মোতায়েনের সক্ষমতা ছিল না মিশরের। এসময় কাজে আসে সেই প্যারাট্রুপার ও কমান্ডো ইউনিটের সেনারা। তাদেরকে যেকোনো মূল্যে ইসমাইলিয়া সিটি দখলে রাখার নির্দেশ দেয়া মিশরীয় হাইকমান্ড। ইতিমধ্যেই জাতিসংঘ যুদ্ধবিরতি কার্যকরের প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে যুদ্ধবিরতির আগেই যেকোনো মূল্যে ইসমাইলিয়া দখল করার জন্য মরিয়া ছিল ইসরাইল।
অপারেশন আবিরে-লেভ :
মিশর যেভাবে সুয়েজ খালের উপর ভাসমান কৃত্রিম ব্রিজ বানিয়ে ট্যাংক ও সেনা পারাপার করেছিল, একইভাবে ইসরাইলও অপারেশন চালাতে গিয়ে ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। মেজর জেনারেল এরিয়েল শ্যারনের (পরিবর্তিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী) নেতৃত্বে শুরু হয় ব্যাটল অফ চাইনিজ ফার্ম। সুয়েজ ক্যানেল পাড়ি দেয়ার নির্দিষ্ট করিডোর করতেই তাদের চারদিন লেগে যায়। চাইনিজ ফার্মের যুদ্ধে বেশ দারুণ কৌশল করে ইসরাইল। প্রথমে ভাসমান ব্রিজ তৈরি করে একটি আর্মার্ড ব্রিগেড ও কয়েক কোম্পানি সেনা পাঠায় তারা। তাদের ঠেকাতে মিশরীয়রা আরেকটু পিছিয়ে গিয়ে এন্টি ট্যাংক মাইন, ট্রেঞ্চসহ শক্তিশালী ডিফেন্স গড়ে তোলে। সাধারণ পদাতিক সেনারা ব্যাপক মার খাচ্ছে দেখে সেখানে প্যারাট্রুপার মোতায়েন করে ইসরাইল। তারা মাইন অপসারণ করে ট্যাংক যাওয়ার জায়গা করতে শুরু করে। কিন্তু ব্যাপক মিশরীয় আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। মেইন আর্মার্ড ব্রিগেডসহ রিএনফোর্সড রেজিমেন্টের অধিকাংশ ট্যাংক মিশরের হামলায় ধ্বংস হয়ে। কিন্তু তারা এটা বুঝেনি যে তেমন বেশি সংখ্যক ট্যাংক না থাকা সত্ত্বেও ইসরাইলিরা কেন মরিয়া হয়ে রাস্তার পেতে রাখা মাইন পরিস্কার করছে। আসলে এই সুযোগে ইসরাইলি ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড সুয়েজ খাল পারাপারে একাধিক ব্রিজ বানিয়ে ফেলে দ্রুত তিনটি ট্যাংক ডিভিশন ও অন্যান্য আর্মার্ড ভেহিকেল নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ফলে ১৮ অক্টোবর সারাদিন ধরে চলা ট্যাংক যুদ্ধের পর মিশরীয়রা পিছু হটে। চাইনিজ ফার্মের যুদ্ধকে আরব-ইসরাইল যুদ্ধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ট্যাংক যুদ্ধ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। উল্লেখ্য পুরো ইয়োম কিপুর যুদ্ধে ইসরাইলের মোট ১০৬৩টি ও আরব জোটের ২২৫০টি ট্যাংক ধ্বংস/শত্রুর হাতে দখল হয়।
মেজর জেনারেল এরিয়েল শ্যারন এবার ইসমাইলিয়া শহরের দিকে নজর দেন। এটি দখল করতে পারলে সুয়েজ খালের ওপাড়ে থাকা তিনটি মিশরীয় ডিভিশনের রসদ সাপ্লাই লাইন বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া ইসমাইলিয়াতে রয়েছে গ্রেট বিটার লেক ও নীলনদের সাথে সম্পর্কযুক্ত বড় একটি স্বাদুপানির ক্যানাল। ডেভেরশায়ারে থাকা পাম্পিং স্টেশনের সাহায্যে আশেপাশের গ্রামগুলোতে পানি দেয়া হতো। ঐ অঞ্চলের পুরোটাই কৃষিক্ষেত থাকায় একে ভিয়েতনাম বলে সম্বোধন করতো ইসরাইলিরা। প্রথমে তারা গ্রেট বিটার লেক ও ইসমাইলিয়া শহরের মাঝখানে থাকা পাঁচটি স্ট্রংপয়েন্ট বাংকার দখল করে। এগুলো থেকে এতদিন সুয়েজ খালের ওপাড়ে ইসরাইলি পজিশনে আর্টিলারি হামলা চালানো হচ্ছিলো। সেটি দখলে আনায় ইসরাইল এবার মিশরীয় পজিশনে হামলা করতে শুরু করে। ইসমাইলিয়া ক্যানেলের উপর চারটি ব্রিজ ছিল। এরমধ্যে একটি ছিল রেলব্রিজ। ইসরাইলিদের হাতে দখল হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় মিশরীয় ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের ডেমোলিশন এক্সপার্টরা সবগুলো ব্রিজজুড়ে বিস্ফোরক বসিয়ে রাখে যেন দরকার হলে সেগুলো উড়িয়ে দেয়া যায়। যদিও বিপদজনক বিধায় ট্যাংক নিয়ে রেল ব্রিজ পাড়ি দেয়ার আশঙ্কা ছিল না।
মিশরের দুটো ম্যাকানাইজ ইনফেন্ট্রি ব্রিগেড (যারা আর্মার্ড ভেহিকেল নিয়ে যুদ্ধ করে) সেখানে ডিফেন্সিভ পজিশন জোরদার করে। ১৮২তম প্যারাট্রুপার ব্রিগেডের জেনারেল খলিল সামগ্রিকভাবে ইসমাইলিয়ার প্রতিরক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি দক্ষিণে নাফিসা ও সেরাবিয়াম গ্রামের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব দেন কর্নেল ইসমাইল আজমীকে। তার ব্রিগেডের অপর আরেকটি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আতিফ মনসিফ ডেভোরশায়ারে একই ধরনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একশোর বেশি সৈনিক ও বেশ কিছু ট্যাংক হারিয়েছেন।
তাই ইসমাইল আজমী নতুন যুদ্ধ পরিকল্পনা করেন। তিনি বেদখলকৃত পাঁচটি স্ট্রংপয়েন্ট পুনর্দখল করার প্ল্যান করেন যেন সুয়েজ খালের দুই পাড়েই যেকোনো ইসরাইলি পজিশনে হামলা করা সম্ভব হয়! এই কাজ করতে গিয়ে সৈনিক সংখ্যা কমে যাওয়ায় কর্নেল ইসমাইল মিশরীয় সেনাবাহিনীর ৭৩তম Sa’iqa কমান্ডো ব্যাটালিয়নকে সেরাবিয়াম প্রতিরক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়। শাইকা কমান্ডোদের ইংরেজিতে Lightning বা বজ্র বলা হয়। এরা মিশরের সবচেয়ে কঠোর ট্রেইনিংপ্রাপ্ত স্পেশাল ফোর্স।
এদিকে এগিয়ে আসছে এরিয়েল শ্যারনের বিরাট সেনাদল। তিনি ইসরাইলি প্যারাট্রুপার ব্রিগেডের কর্নেল ড্যানি ম্যাট ও আর্মার্ড ব্রিগেডের কর্নেল হাইম এরেজকে ব্রিজগুলো দখলে নিতে আগে আগে পাঠান। যদিও তখনই আক্রমণ শুরু করার জন্য তাকে অর্ডার দেয়নি ইসরাইলি হাইকমান্ড। তিনি নিজে থেকেই যুদ্ধ শুরু করে দেন। ড্যানি ম্যাটের একটি কোম্পানি সেরাবিয়ামে হামলা করে শাইকা কমান্ডোদের প্রতিরোধের ব্যাপক মুখে পড়ে। অবস্থা এমন হয়েছে যে মিশরীয় ও ইসরাইলিরা পরস্পরের ১০-১৫ মিটারের মধ্যে এসে গোলাগুলি চালাতে থাকে! ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির (১১ নিহত, ২৭ আহত) মুখে ইসরাইলি প্যারাট্রুপাররা পিছু হটে। রাতের বেলা মিশরীয় আর্টিলারি হামলা শুরু হবে বিধায় শাইকা কমান্ডোদের পিছু হটার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু তারা জায়গা সামান্য বদলে নিয়ে ডিফেন্সিভ পজিশন ধরে রাখে। ফলে স্বপক্ষের আর্টিলারি হামলায় বেশ কয়েকজন মিশরীয় কমান্ডো ফ্রেন্ডলি ফায়ারে নিহত হয়।
দ্বিতীয় দিন সকালে ইসরাইলিরা দ্বিগুণ শক্তিতে আবার হামলা করে। ততক্ষণে ডেভেরশায়ার থেকে শাইকা ব্যাটালিয়নের দুই কোম্পানি সৈন্য সেরাবিয়ামের প্রতিরক্ষায় শক্তিবৃদ্ধি করেছে। সকালের হামলা এতোটাই ভয়াবহ ছিল যে দুইপক্ষের সেনারা শেষ পর্যন্ত হ্যান্ড-টু-হ্যান্ড কমব্যাটে (হাতাহাতি লড়াই) লিপ্ত হয়। দুইপক্ষেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই লড়াইয়ে ইসরাইলের ক্ষয়ক্ষতি কেমন তা জানা না গেলেও মিশরের ১১ অফিসারসহ ৮৫ জন কমান্ডোর নিহতের তথ্যে ধারণা করা যায় আক্রমণকারী ইসরাইলিদের ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা আরো বেশি হবে। সেই রাতে ইসরাইলি আর্টিলারি হামলা হবে ভেবে কমান্ডোরা পিছু হটে এবং যথারীতি থেকে বেঁচে যায়।
দ্বিতীয় দিনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো কর্নেল ইসমাইল আজমীর পাঁচটি স্ট্রংপয়েন্ট পুনরায় দখল করা। তবে তিনি সমানভাবে সবগুলো স্ট্রংপয়েন্টে সেনা মোতায়েন করেন যা কৌশলগত ভুল। তার উচিত ছিল সর্বদক্ষিণের পয়েন্টে বেশি সৈন্য মোতায়েন করা। ইসরাইলিরা যখন দেখলো স্ট্রংপয়েন্ট ব্যবহার করে সুয়েজ খালে থাকা ভাসমান ব্রিজে আর্টিলারি হামলা গাইড করা হচ্ছে তখন সর্বদক্ষিণের পয়েন্টেই প্রথম হামলা করেছিল। ততক্ষণে রিএনফোর্সমেন্ট আসার আর সুযোগ নেই। তবে মিশরীয় আর্টিলারিতে ইসরাইলের ব্রিজসহ ব্যাপক সেনা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
সেদিন বিকালেই মিশর সেনাবাহিনীর চীফ অফ স্টাফ জেনারেল সাজলি প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের অর্ডার নিয়ে ব্রিগেডিয়ার খলিলের কাছে আসেন। প্রেসিডেন্টের অর্ডার ছিল ইসমাইলিয়া থেকে পিছু হটা এবং সুয়েজ খালের পূর্ব পাড়ে শক্তি থার্ড ডিভিশনের বৃদ্ধি করা। তারা দুজনে মিলে অর্ডার অমান্য করেন। কারণ তারা ভেবেছিলেন ইসরাইলিরা যেহেতু একদিক দিয়ে সুয়েজ খাল অতিক্রম করেছে এবং ফিরে যাওয়ার পথ অক্ষত আছে তাহলে পূর্ব পাড় দিয়ে আবারও সুয়েজ অতিক্রম করার ঝুঁকি নিবেনা। তাই থার্ড ডিভিশনের আর্মার্ড ব্রিগেডকে ইসমাইলিয়ার উত্তরে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মোতায়েন হতে নির্দেশ দেন এবং ইনফেন্ট্রি ব্রিগেডকে দক্ষিণে এগিয়ে আসতে বলেন যেন ইসরাইলিদের করিডোর ছোট হয়ে আসে। কর্নেল আজমীর ব্যাটালিয়ন ইসমাইলিয়াতেই থাকবে। তাদের এন্টি ট্যাংক মিসাইলের অভাব ও থার্ড ডিভিশন থেকে ধার করে এনে পুষিয়ে দিয়েছিলেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই পক্ষ। (চলবে)
No Comments