ব্যাটল অফ স্ট্যালিনগ্রাদ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পিছনে হিটলারের বেশ কয়েকটি অদূরদর্শী ও খামখেয়ালিপূর্ন ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে রাশিয়া আক্রমণ। অনেকেই হয়তো জানেন না যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও জার্মানি পরস্পরের মিত্র ছিল! জোসেফ স্ট্যালিন ও এডলফ হিটলার পরস্পরের আদর্শগত শত্রু হলেও তাদের মধ্যে অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যার ফলে জার্মানি যখন পোল্যান্ড আক্রমণ করে তখন বিপরীত দিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে দেশটিকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।
অপারেশন বারবারোসা :
মুখে বন্ধুত্ব হলেও হিটলারের মনের খবর জানতেন না স্ট্যালিন। তিনি জার্মানদের জন্য ইস্টার্ন ইউরোপে Lebensraum তথা ‘living space’ নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। এজন্য সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত বিশাল এলাকা দখলের চিন্তা করেন। ফ্রান্স জয়ের পর হিটলার ছিলেন রণ উন্মত্ত। আটলান্টিকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটলশিপ, জার্মান ইউবোট। আফ্রিকায় একের পর এক সাফল্য লাভ করেছেন ফিল্ডমার্শাল এরউইন রোমেল। সব মিলিয়ে চারদিকে জার্মান বাহিনীর জয়জয়কার। হিটলারের ধারণা ছিল তার দুর্ধর্ষ জার্মান আর্মি দশ সপ্তাহের ভিতর সোভিয়েত তেলক্ষেত্র, শিল্পকারখানা বন্দরগুলো দখলে নিতে পারবে। ফলে ২২ জুন, ১৯৪১ সালে শুরু হয় অপারেশন বারবারোসা। ৩,৭০০+ ট্যাংক, ২৩,৪০০+ আর্টিলারি, ৫,৩০০+ যুদ্ধবিমান, ৬ লাখ যানবাহন, ৬ লাখ ঘোড়া(!) নিয়ে অক্ষশক্তির ৩৮ লাখ সেনা যে হামলা শুরু করে তা আজ অবধি ইতিহাসের বৃহত্তম ইনভেশন অপারেশন হিসেবে পরিচিত। বিশাল এই সেনাদলকে নর্থ, সেন্টার, সাউথ নামে তিনটি গরুপে ভাগ করা হয়। এদের মধ্যে সিক্সথ আর্মি নামে পরিচিত সেন্টার গরুপের দায়িত্ব ছিল রাজধানী মস্কো দখল করা। যথারীতি সোভিয়েত সেনারা মাটি কামড়ে ধরে রাজধানী রক্ষায় লড়াই করছিল। ১১,০০০ ট্যাংক, ৯০০০+ যুদ্ধবিমান নিয়ে ২৯ লাখ সোভিয়েত সেনা এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। জার্মান বাহিনী যখন মস্কো থেকে মাত্র ১২ মাইল দূরে তখন ১৯৪১ এর ডিসেম্বরের প্রচন্ড শীত এবং রেড আর্মির প্রবল প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হয় যায় জার্মানির মস্কো অভিযান। এরই মধ্যে আকস্মিক সোভিয়েত কাউন্টার এট্যাকে জার্মানরা ১৫০ মাইল পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
কিন্তু হিটলার এত সহজে হাল ছেড়ে দেয়ার পাত্র ছিলেন না। ফিল্ড মার্শাল ওয়ালথার ভন ব্রাউচিটস কে বরখাস্ত করে এবার নিজেই দায়িত্ব নিলেন ইস্টার্ণ ফ্রন্টের! কিন্তু খুব দ্রুত শেষ হয়ে আসছিল জার্মান আর্মির জ্বালানী তেলের রিজার্ভ। হিটলার তাই চেচনিয়ার তেলের খনিগুলো দখল করতে মরিয়া হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে থাকা তার সেনাবাহিনীর একটি অংশকে সেদিকে পাঠালেন। অপর অংশকে পাঠালেন স্ট্যালিনগ্রাদের দিকে। কিন্তু জার্মান বাহিনী চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনিতে পৌঁছানোর তার তেলের খনিগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল সোভিয়েতরা। হিটলার এবার স্ট্যালিনগ্রাদের পতন ঘটাতে মরিয়া হয়ে উঠেন। শহরটি ক্ষমতাসীন সোভিয়েত সুপ্রিম লিডারের নামে হওয়ায় তারাও সেটি রক্ষার্থে মরণপণ লড়াই শুরু করে। ফলে রচিত হয় আধুনিক যুদ্ধের ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তাক্ত যুদ্ধ!
হিটলারের গোয়ার্তুমি :
সিক্সথ আর্মি নামে পরিচিত সেন্টার গরুপকে ট্যাংক দিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল ফোর্থ প্যানজার আর্মি। কিন্তু তেল সংকটে তারা সময়মতো স্ট্যালিনগ্রাদে পৌঁছাতে পারেনি। এরই মধ্যে সোভিয়েত বাহিনীর দুর্বার আক্রমণে জার্মানদের সাহায্যকারী রোমানিয়ান-হাঙ্গেরিয়ান সেনাদের পরাজয়ে সিক্সথ আর্মির সাপ্লাই লাইন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ জার্মান সেনারা এখন পুরোপুরি শত্রু বেষ্টিত হয়ে পড়েছে।
তারা চাইলে প্রবল যুদ্ধ করে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা সোভিয়েত বাহিনীর অবরোধ ভেঙে পিছিয়ে আসতে পারতো। কিন্তু হিটলার যেকোনো মূল্যে স্ট্যালিনগ্রাদ শহর দখল ধরে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল এই শহর। ইউরোপের দীর্ঘতম নদী ‘ভল্গা’ এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশকে বিভক্ত করেছে। নদীর ঐ পাড়ে অর্থাৎ এশিয়া প্রান্তে অবস্থিত ছিল স্ট্যালিনগ্রাদ শহর। তখন সাত লক্ষ লোকের আবাস ছিল এই শহরে। জার্মান অবরোধে প্রথমে তাদের যেমন অবস্থা খারাপ হয়েছিল তেমনি পরবর্তীতে দুই পক্ষের লড়াইয়ে ব্যাপক সিভিলিয়ান প্রাণহানি ঘটেছিল। শহরটির সোভিয়েত জনগণ যার যা কিছু তাই নিয়ে পিতৃভূমি রক্ষার লড়াইয়ে যোগদান করে।
স্ট্যালিনগ্রাদ যুদ্ধ :
১৯৪২ সালের ২৩ আগস্ট শুরু হয়েছিল ব্যাটল অব স্ট্যালিনগ্রাদ। প্রথমেই জার্মান বিমানবাহিনী একটানা এক সপ্তাহ ধরে বোমাবর্ষণ করতে থাকে। এতে পুরো শহর প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এরপর পদাতিক বাহিনী ও জার্মান ট্যাংকগুলো মিলে অভিযান শুরু করে। শুধুমাত্র স্ট্যালিনগ্রাদ যুদ্ধে অক্ষ শক্তির ২.৭ লাখ সেনার অংশগ্রহণ করেছিল। এছাড়া ৫০০ ট্যাংক, ১৬০০ বিমান আক্রমণে অংশ নিয়েছিল। জার্মান হাইকমান্ড মনে করেছিল খুব সহজেই পতন হবে স্ট্যালিনগ্রাদের। কিন্তু জোসেফ স্ট্যালিননিজের নামানুসারে রাখা শহরটিকে রক্ষার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করলেন। ১.৮৭ লাখ সৈনিকের পাশাপাশি ৪০০ ট্যাংক, ৩০০ যুদ্ধবিমান শহরটির প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত হয়। দৃঢ় প্রত্যয়ী সোভিয়েত সৈনিকদের প্রবল বাঁধার সম্মুখীন হল জার্মানরা।
বিমান ও আর্টিলারি হামলায় ক্ষতবিক্ষত শহরের ভগ্ন বিল্ডিংগুলো হয়ে উঠল রাশিয়ানদের একেকটি দুর্গ। এদের মধ্যে ‘পাভলভ’স ফোর্ট’ এর কথা আলাদাভাবে বলতেই হবে। সার্জেন্ট ইয়াকভ পাভলভ এর নেতৃত্বে এক প্লাটুন সোভিয়েত সেনা ভল্গা নদীর তীরে একটি চারতলা বিল্ডিং তুমুল লড়াই করে পুরো ৬০ দিন দখলে রেখেছিল! এটি ছিল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভবন। এখান থেকে উত্তর-পশ্চিম-দক্ষিণ দিকে এক কিঃমিঃ এলাকা মেশিনগানের রেঞ্জে রাখা যায়। জার্মানরা কয়েকবার চেষ্টা করে এটির দখল নিতে ব্যর্থ হয়। স্ট্যালিন বিশেষ এক অর্ডারে এই বিল্ডিং দখলে রাখতে ‘এক পা পিছু হটা যাবেনা’ এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন।
স্ট্যালিনগ্রাদ যুদ্ধে এমনও দেখা গিয়েছে যে কিছু এলাকা জার্মানরা দিনের বেলায় দখল করেছে, রাতেই আবার পুনর্দখল করে নিয়েছে সোভিয়েতরা সৈন্যরা! তারা গেরিলা যুদ্ধের পন্থা বেছে নিয়েছিল। সোভিয়েত চোরাগুপ্তা হামলার কাছে বারবার পরাস্ত হচ্ছিলো জার্মানরা। এজন্য তারা এই যুদ্ধের নাম দিয়েছিল র্যাটেনক্রিয়েগ বা ইঁদুরের যুদ্ধ। হঠাৎ করে হামলা করে অল্প কয়েকজন জার্মান মেরে পালিয়ে যেত সোভিয়েতরা। আর স্নাইপারদের জ্বালাতন তো ছিলই। পুরো যুদ্ধে শত শত শার্পশ্যুটার সোভিয়েত নারী-পুরুষ স্নাইপার হিসেবে হিসেবে যুদ্ধ করেছিল। ভাঙা বিল্ডিংগুলো ছিল স্নাইপার লড়াইয়ের আদর্শ যুদ্ধক্ষেত্র। জার্মান অফিসাররা বেশিরভাগ সময়ে তাদের টার্গেট হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া দুই পক্ষ স্ট্যালিনগ্রাদে এত কম দূরত্বের মধ্যে দুই পক্ষের যুদ্ধ হয়েছে যে প্রায়ই জার্মান-সোভিয়েত সেনারা পরস্পরের পজিশন দখল করতে হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাটে লিপ্ত হতেন!
যুদ্ধের তীব্রতা কতটা ভয়াবহ ছিল তা বুঝাতে পাঠককে একটি চমকপ্রদ তথ্য দিব। স্ট্যালিনগ্রাদ শহরের উপকণ্ঠে ‘মামায়েভ কুরগান’ নামক পাহাড়টির উপর দুই পক্ষের এতবেশি কামানের গোলা বিস্ফোরিত হয়েছিল যে সে বছর প্রচন্ড শীতের মধ্যেও পাহাড়ে কোনো বরং জমেনি। পুরো পাহাড়ের সমস্ত বরফ গলে গিয়েছিল। এই পাহাড়টি মোট ১৪ বার দখল ও পাল্টা দখল করেছিল সোভিয়েত-জার্মানরা। হিটলারের চূড়ান্ত নির্দেশ পাওয়ার পর জার্মান সৈন্যরা শহরের প্রায় ৯০% নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে সোভিয়েত রেড আর্মির পাল্টা হামলায় পুরো জার্মান বাহিনী স্ট্যালিনগ্রাদে বিচ্ছিন্ন হয়ে আটকা পড়ে যার কথা একটু আগেই বলেছি। হিটলারের গোয়ার্তুমির কারণে কবর রচিত হয় হাজার হাজার সেনার।
জার্মান বাহিনীর আত্মসমর্পণ :
জার্মান হাইকমান্ড শীতকাল শেষ হওয়ার পর পুনরায় আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু হিটলারের জেদের কারণে তা ভেস্তে যায়। সিক্সথ আর্মির প্রধান জেনারেল ফ্রেডরিখ পাউলাস স্ট্যালিনগ্রাদ থেকে আপাতত পিছু হটার অনুমতি চাইলে তিনি তা দেননি। বরং তাকে সর্বোচ্চ পদ ফিল্ড মার্শাল পদে পদোন্নতি দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে উৎসাহ ও নির্দেশ দেন। কিন্তু একজন জেনারেলকে যুদ্ধ করতে হয় যুদ্ধের পরিস্থিতি বুঝে। তখন তার বাহিনীর গোলাবারুদ, খাদ্য ও অন্যান্য রসদ প্রায় শেষের দিকে। পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের অভাবে তীব্র শীতে জার্মান সেনাদের অবস্থা খারাপ। কিন্তু তাদের প্রতিপক্ষ সোভিয়েত রাশানরা ভয়ংকর এই শীতে অভ্যস্ত। হিটলার ফিল্ড মার্শাল পাউলাসকে আশ্বাস দিলেন যে কার্গো বিমানে করে পৌঁছে দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় রসদ ও অস্ত্রশস্ত্র। একইসঙ্গে শহরের বাইরে থাকা প্যানজার ডিভিশন সোভিয়েত অবরোধ ভেঙে তার বাহিনীর সাথে যোগ দিবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ভিন্ন। স্ট্যালিনগ্রাদের সিক্সথ আর্মির জার্মান সৈন্যদের প্রতিদিন রসদ চাহিদা ছিল গড়ে ৮০০ টন। কিন্তু কার্গো বিমানে সব মিলিয়ে সাপ্লাই ছিল সবমিলিয়ে প্রায় ১৪০ টন! তার উপর সোভিয়েত বিমান ও গেরিলা হামলায় রসদ নষ্ট হচ্ছিলো।
শেষ পর্যন্ত হিটলার পরিস্থিতি বুঝতে পেরে পিছু হটার অনুমতি দিয়েছিলেন বটে। তবে শহরের ভেতরের নিয়ন্ত্রণ অক্ষুন্ন রাখতে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু অস্ত্র ও রসদের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়া জার্মান আর্মির পক্ষে এটি করা আদৌ সম্ভব ছিল না। বরং শহরের ভিতরে অনেকগুলো ছোট ছোট পকেটে রেজিস্ট্যান্সে বিভক্ত হয়ে পড়ে জার্মান বাহিনী। খাদ্য সংকট ছাড়াও প্রয়োজনীয় গোলাবারুদের অভাব প্রকট আকার ধারণ করে। অপারেশন শুরুর পাঁচ মাস দশদিন পর ১৯৪৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় জার্মানরা। এর কয়েক দিন আগেই বন্দী হয়েছিলেন ফিল্ড মার্শাল ফ্রেডরিখ পাউলাস। স্ট্যালিনগ্রাদসহ পুরো যুদ্ধে মোট প্রায় ১.৮৬ লাখ জার্মান সৈন্য নিহত হয়েছিল! আহতের সংখ্যা মিলিয়ে অক্ষশক্তির মোট হতাহতের সংখ্যা প্রায় চার লাখ। বন্দী হয়েছিল প্রায় ৯১ হাজার।
কিন্তু এদের অবস্থা মৃতদের চেয়েও খারাপ হয়েছিল। সোভিয়েত প্রিজনার ক্যাম্পে বাধ্যতামূলক শ্রম, অসুস্থতা, খাদ্যের অভাব, যুদ্ধকালীন জখম ও পরিবেশের কারণে যুদ্ধ শেষে মারা যেতে যেতে ১৯৫৫ সালে প্রায় ৬ হাজার সেনা মুক্তি পায়। যুদ্ধপরাধের অভিযোগে অনেকেই মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত হন। শুধুমাত্র স্ট্যালিনগ্রাদ যুদ্ধেই জার্মানির প্রায় ৯০০ বিমান, ১,৫০০ ট্যাংক, ৬,০০০ কামান ধ্বংস হয়। জার্মানির পরাজয় ও আত্মসমর্পণের ফলে ৭৪৪ বিমান, ১,৬৬৬ ট্যাংক, ৫,৭৬২ আর্টিলারি গান শত্রুর হস্তগত হয়। তবে সোভিয়েত সেনাদের ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। তাদের প্রায় ৪.৯৭ লাখ নিহত ও ৬.৫০ লাখ আহত হয়েছিল! ধ্বংস হয়েছিল ২,৭৬৯ টি বিমান, ৪,৩৪১ টি ট্যাংক, ১৫,৭২৮ টি কামান।
সব মিলিয়ে পুরো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ২৭ লাখ সোভিয়েত সেনা/জনগণ নিহত হয়েছিল। এজন্যই স্ট্যালিন বলেছিলেন,
“WW2 won by American steel, British Intelligence & Soviet blood”
জার্মানদের পরাজয়ের কারণ :
এটি স্পষ্ট যে হিটলারের হটকারী সিদ্ধান্ত স্ট্যালিনগ্রাদে জার্মানদের পরাজয়ের প্রধান কারণ ছিল। শীতের আগেই স্ট্যালিনগ্রাদ বিজয়ের ব্যাপারে হিটলার এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে জার্মান বাহিনীকে রাশিয়ার প্রচন্ড শীত মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ভারী কাপড় সরবরাহ করেননি। এছাড়া এত জেনারেল পাউলাসকে ডিসেম্বরের শুরুতে পিছু হটার অনুমতি দিলে হয়তোবা এত বড় ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
উল্টো পাউলাসকে ফিল্ড মার্শাল বানিয়েছেন যেন তিনি আত্মসমর্পণের চিন্তা মাথায় ও না আনেন। জার্মান হাইকমান্ডের বিশ্বাস ছিল কোনোরকমে শীতে সোভিয়েতদের ঠেকিয়ে দিতে পারলে পরের গ্রীষ্মে পুনরায় স্ট্যালিনগ্রাদসহ মস্কো দখল করা যাবে। কিন্তু অহেতুক আত্মবিশ্বাস, মাত্রাতিরিক্ত জাত্যভিমান ও প্রবল অহংকারে পূর্ন থাকা কর্তৃত্ববাদী হিটলারের ভুল সিদ্ধান্ত স্ট্যালিনগ্রাদে পরাজয়ের পাশাপাশি পুরো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মানির পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কেননা এরপর সোভিয়েত বাহিনী জার্মানির অভিমুখে অভিযান শুরু করে। অপরদিক দিয়ে মিত্রবাহিনীও D-Day এর মাধ্যমে ফ্রান্স থেকে জার্মানি অভিমুখে কাউন্টার অফেন্সিভ অপারেশন শুরু করে। দ্বিমুখী চাপ সামলাতে না পেরে জার্মান সেনারা পিছু হটতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সোভিয়েত সেনাদের হাতেই রাজধানী বার্লিনের চূড়ান্ত পতন ঘটে।
তাই বলা যায় যে স্ট্যালিনগ্রাদ যুদ্ধই বদলে দিয়েছিল গোটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভবিষ্যত। এরকম ভয়ংকর রক্তাত্ত যুদ্ধ আর না হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
স্ট্যালিনগ্রাদ যুদ্ধের আরো কিছু ছবি: