১ লাখ টাকার নিচে ছোট ব্যবসার আইডিয়া
একটি মানুষ যখন নিজের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতে থাকে বা উপার্জনের জন্য কোন একটি পথ খুঁজতে থাকে তখন বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কথা চিন্তা করে থাকে। একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্তত নূন্যতম কিছু টা হলেও মূল্ধনের প্রয়োজন হয়ে থাকে। কেউ এই মূলধন ইনভেস্ট করতে না পেরে আর ব্যবসার চিন্তাধারা থেকে সরে আসে। বর্তমান সময়ে স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় অনেকে পারিবারিক ভাবে হাল ধরতে চায়। কিন্তু মূল্ধনের কথা চিন্তা করে আর সম্ভব হয়ে উঠেনা। কিন্তু আজকাল কার এই সময়ে একটু খুটিনাটি চিন্তা করে বিশেষ করে এই ইন্টারনেটের যুগে খুব সহজে এক লাখের কম মূল্ধন দিয়ে ব্যবসা শুরু করা যায়।
এক লাখ টাকায় ব্যবসা শুরুর বেশ কয়েকটা আইডিয়াঃ
ফুড ভ্যান
আপনি খুব সীমিত বাজেটে একটি ফুড ভ্যান চালু করতে পারেন।এই ফুড ভ্যান চালু করতে আপনার প্রয়োজন হবে একটি সিলিন্ডার আর ব্যাটারি বিদ্যুৎ এর সংযোগ। এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ফুড ভ্যানটির জায়গা নির্ধারণ করা।
বর্তমানে অফিস ক্যাটাগরির মানুষ থেকে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সকল স্তরের মানুষের ফাস্টফুড জাতীয় খাবার যেমন বার্গার, মোমও ,স্যান্ডউইচ, পাস্তা ইত্যাদি পছন্দের তালিকায়। তাই পছন্দনীয় খাবারের এই ম্যানু নিয়ে আপনি কোন স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কমার্শিয়াল এরিয়ায় স্থাপন করে আপনি আয় করতে পারেন। তবে আপনার কোয়ালিটি এবং হাইজিন এর ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এবং মূল্য নির্ধারণেও যতেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।
ক্যাটারিং সার্ভিস
ক্যাটারিং সার্ভিস বলতে বুঝায় খাবার প্রস্তত করে খাবার সরবরাহ করা। ঘরে খাবার প্রস্তত করে সেই খাবার গুলো বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চুক্তির মাধ্যমে সরবরাহ করাই হল মূলত ক্যাটারিং সার্ভিস। এতে মাসশেষে একটি নির্দিষ্ট অ্যামাউন্টের টাকা আয় করা যায়। তাছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্টানের খাবার এর অর্ডার নিয়ে তা সরবরাহ করা। এই ক্যাটারিং সার্ভিস আপনি খুব সহজে বাসা থেকে করতে পারেন। আর তা না হলে আপনি একটু কমার্শিয়াল এলাকার দিকে ২রুমের একটা ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে থেকে শুরু করতে পারেন আপনার এই ক্যাটারিং সার্ভিস বিজনেস। এই বিজনেস নারীদের জন্য আয়ের একটি অন্যতম মাধ্যম। এই বিজনেস দ্বারা অনেক নারী নিজেদের কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে পারে সহজে।
গিফট আইটেমের ব্যবসা
বর্তমানে খুব ট্র্যান্ডিং এবং জনপ্রিয় বিজনেস হল গিফট আইটেমের বিজনেস। এই বিজনেস আপনি খুব ছোট দোকান নিয়ে করতে পারেন। হাতের কাছে কিংবা বাজেটে আপনি এমন দোকান না পেয়ে থাকলে আপনি অনলাইনে এই বিজনেস শুরু করতে পারেন। এই গিফট আইটেমে আপনি বিভিন্ন শো-পিস উইশিং কার্ড, অথবা কাপল কম্বো রাখতে পারেন। কিংবা অনেক গুলা জিনিস মিলিয়ে একটি কম্বো বানাতে পারেন যেমন শাড়ি, চুড়ি ফুল টিপ অপরদিকে পাঞ্জাবী ঘড়ি পারফিউম ইত্যাদি করে সেল করতে পারেন। এই বিজনেসে আপনার কাঁচামাল আপনি যেই জেলাতে থাকেন সেই জেলার পাইকারি বাজারের থেকে আপনি সংগ্রহ করতে পারেন। যেখানে যেমন সুবিধা মত। এই বিজনেস খুবই লাভজনক। তবে খেয়াল রাখতে হবে জিনিসের কোয়ালিটি যেন সবসময় অথেনটিক থাকে। তবেই আপনার বিজনেস খুব ভাল আয় করতে পারবেন।
ফ্রোজেন নাস্তার বিজনেস
বর্তমানে কমবেশী মানুষই রেডিমেইড জিনিসের উপর নির্ভরশীল।
তাছাড়া পরিবারে যদি দুজনে কর্মব্যস্ত থাকে তাহলে তো ফ্রোজেন জিনিসের জুড়ি নেই। সেক্ষেত্রে মানুষ নিজে খাওয়ার জন্য হোক কিংবা মেহমান এর জন্য ফ্রোজেন নাস্তা পরটা কিনে থাকে। আপনি তেমন বিভিন্ন আইটেম যেমন সমুচা, সিঙ্গারা,পরটা, রোল ,কাটলেট ইত্যাদি আরও ভিন্ন ধরণের আইটেম ফ্রোজেন হিসেবে সেল করতে পারেন। এটার জন্য আপনি অনলাইনে একটা পেইজ কিংবা একটি গ্রুপ খুলতে পারেন। তার মাধ্যমে আপনার বিজনেস রিচ করতে পারেন। তাছাড়া আপনি ফুডপান্ডাতে আপনার বিজনেস চালাতে পারেন। কিংবা আশেপাশে এমন বিভিন্ন দোকানে আপনার জিনিস সম্পর্কে জানিয়ে তা সেল করতে পারেন। তবে সবসময় কোয়ালিটি এবং হাইজিন মেইনটেইন করবেন এটি আপনার বিজনেস কে এগিয়ে নিতে সবসময় সাহায্য করবে।
একটি ক্যাফে শপ/জুস বার দেওয়াঃ
খুব অল্প পুঁজিতে এবং ছোট স্পেসে চাইলে একটা ক্যাফে বা জুস বার দেওয়া যায়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান কিংবা অফিস এরিয়া তে ছোট একটি দোকান নিয়ে কিছু বসার জায়গা করে খুব সুন্দর ভাবে এটি করা যেতে পারে। যদি সুযোগ হয়ে থাকে তাহলে দুটাই একসাথে রাখা যেতে পারে। সবার পছন্দমতো দেওয়া ও সম্ভব এবং মোটামুটি একটি আয়ও ।
একটি ছোট লাইব্রেরী কিংবা ভাসমান লাইব্রেরী দিয়েঃ
একাডেমীক বইয়ের পাশাপাশি আমরা এমন অনেকে আছি যারা বই পড়তে ভালবাসি। বিভিন্ন গল্পের বই, ধর্মীয় বই, ইতিহাস, জীবনী ইত্যাদি আরও নানান ধরণের বই অবসর সময়ের সঙ্গী হই। কিন্তু ভিবিন্ন কারণে এমন সব বই সবার কাছে কালেকশনে থাকেনা। তাই আপনি যদি কোন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ছোট একটি দোকান নিয়ে ওয়েল ডেকোরেটেড করে ভিন্ন ধরণের কিছু কিছু বই রেখে সাপ্তাহিক কিংবা মান্থলি বই গুলো একটি নিরধারিত মূল্য এবং নির্ধারণ করে সময়ে পড়তে দেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার একটি উপার্জনের পথ হতে পারে সহজে। আপনি যদি নির্ধারিত কোন স্থানে এই লাইব্রেরী করতে না পারেন তাহলে তার পরিবর্তে আপনি এই ভাসমান লাইব্রেরীর ব্যবস্থা করতে পারেন। এই ভাসমান লাইব্রেরীতে আপনি আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন। যারা বিভিন্ন সময় কিংবা কাজের কারণে সেই নির্ধারিত জায়গাতে গিয়ে বই পড়তে পারে না তারা এই ভাসমান লাইব্রেরীর কারণে নিজেদের শখ পূরণ করতে পারে।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট বলতে বুঝায় যেকোনো অনুষ্ঠান, ঘটনা কিংবা কোনো আয়োজন সম্পন্ন করার জন্য সার্বিক কাজ পরিচালনা করা। এটি একটি সৃজনশীল পেশাও বটে। যেকোনো বড় কিংবা ছোট অনুষ্টান যেমন বিয়ে, মেজবান, আকিকা ,মেলা ,পার্টি, কনসার্ট ইত্যাদি সাজানো গুছানো সহ নিয়ে অনুষ্টান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তদারকি করাই হল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর কাজ। এর জন্য আপনার সবচেয়ে বেশি যেই জিনিসের প্রয়োজন হবে তা হল ক্রিয়েটিভিটি। আপনি আপনার ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে পুরো ইভেন্ট কে সুন্দর করে তুলতে পারবেন।তবে এই ইভেন্ট
ম্যানেজমেন্ট আপনি একা কখনও করতে পারবেন না তার জন্য আপনার একটা টিমের প্রয়োজন হবে। আপনি আপনার সুবিধা মতো টিম গঠন করে নিবেন। আর এই কাজে মূল্ধন হিসেবে ইভেন্টের প্রয়োজনীয় সামগ্রী লাইটিং, কার্পেট, ফুল, ঝারবাতি ইত্যাদি। আপনি আপনার কাজ কে যত আকর্ষনীয় ভাবে রিপ্রেজেন্ট করতে পারবেন ততই আপনার কাজ ডিমান্ড থাকবে। এবং আপনি একটি ভালো অ্যামাউন্ট ও আয় করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি খুব অনলাইন ভিত্তিক টিচিং করতে পারেন, লিখালিখি তে আগ্রহ থাকলে কন্টেন্ট লিখতে পারেন ইডিটিং করতে ভাল জানলে ভিডিও ইডিটিং এর কাজ করতে পারেন।
সর্বশেষ কথা হল, কোন কাজই ছোট নয় তা হোক এক লক্ষ্য টাকা দিয়ে শুরু কিংবা পাঁচ হাজার দিয়ে শুরু। সব কাজে সবার প্রথমে আগ্রহ থাকতে হবে। ছোট থেকেই বড় পরিসরে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন পরিশ্রম লেগে থাকা। উপরে উল্লেখিত সব কয়টি দিক দিয়েই আপনি মোটামুটি ভালো ইনকাম করতে পারবেন যদি তা আপনি ভাল ভাবে সঠিক ভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। সকলের কাছে তুলে ধরতে পারেন। সততা, দায়িত্ব, পরিশ্রম ব্যবসার প্রতি একনিষ্টতা অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।