খাগড়াছড়ির দর্শনীয় স্থান সমূহ এবং বিস্তারিত ট্যুর গাইড

খাগড়াছড়ি জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে একটি হল খাগড়াছড়ি । পাহাড়, নদী, ছড়া, ঝিরি ও সমতল ভূমি মিলে  একটি অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত অঞ্চল এই খাগড়াছড়ি । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আর রহস্যময়তায় ঘেরা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা । প্রকৃতিপ্রেমী, অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় বা ভ্রমণবিলাসীদের জন্য একটি অন্যতম জনপ্রিয় স্থান । স্থানীয় ভাবে খাগড়াছড়ি কে ফালাং তাউং , চেংমি নামেও ডাকা হয়ে থাকে।

তবে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক খাগড়াছড়ি জেলার  প্রধান প্রধান ভ্রমণ স্থান গুলো নিয়ে বিস্তারিত ;

* আলুটিলা গুহা

* রিছাং ঝর্ণা

* তৈদুছড়া ঝর্ণা

* নিউজিল্যান্ড পাড়া

* হাতিমাথা

* আলুটিলা গুহা 

আলুটিলা গুহা বাংলাদেশের  পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক গুহা। গুহাটিকে আলুটিলা রহস্যময় গুহাও বলা হয়। স্থানীয়রা একে বলে মাতাই হাকড়।খাগড়াছড়ি  জেলার  মাটিরাঙ্গা উপজেলায়  মূল শহর হতে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে সমুদ্র সমতল হতে ৩০০০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট আলুটিলা বা আরবারী পাহাড়ে আলুটিলা গুহা অবস্থিত।

এটি খাগড়াছড়ির একটি নামকরা পর্যটন কেন্দ্র। এই গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। কোন প্রকার সূর্যের আলো প্রবেশ করে না বলে টর্চের আলো বা মশাল নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। গুহাটি দেখতে অনেকটা ভূ-গর্ভস্থ টানেলের মত যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। এর তলদেশে একটি ঝর্ণা প্রবহমান। হাটির এপাশ দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বের হতে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে।

* রিছাং ঝর্ণা

রিছাং ঝর্ণা   খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা  সাপমারা গ্রামে অবস্থিত একটি পাহাড়ি ঝর্ণা।যে কারণে এটিকে সাপমারা রিছাং ঝর্ণা বলেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১০ কি.মি.। এই ঝর্ণার উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট।মূল সড়ক থেকে পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে, ঝর্ণার পথে ২৩৫ ধাপের সিঁড়ি দিয়ে নামতে হয়। বর্ষাকালে সিড়ি দিয়ে নামার সময়ই ঝর্ণার শব্দ শোনা যায় । উঁচু পাহাড়ের গা ঘেঁষে যেতে যেতে যে কারও দৃষ্টি আটকে যাবে পাহাড়ী সবুজের সমারহে। শুধু ঝর্ণাটিই নয়, ঝর্ণা অভিমুখে সমগ্র যাত্রা পথটাই দারুন রোমাঞ্চকর। ১০০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে নিচে গড়িয়ে পড়ে ঝর্ণার জলধারা। পানির গতিপথ ঢালু হওয়ায় প্রাকৃতিক ওয়াটার স্লাইডিং এর সৃষ্টি হয়েছে, যা এই ঝর্ণার প্রধান আর্কষণ।

 * তৈদুছড়া ঝর্ণা

তৈদুছড়া ঝর্ণা বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলায়  অবস্থিত।এই ঝর্ণার উচ্চতা ৩০০ ফুট। পাহাড়ের গায়ে অসংখ্য পাথরের ধাপ আছে এই ধাপ বেঁয়ে জল গড়িয়ে পড়ে নিচে। জঙ্গলের মাঝে আঁকা বাঁকা পাহাড়ের ভাঁজ দিয়ে বয়ে চলে তৈদুছড়া ঝর্ণার জল। শীতল স্বচ্ছ টলমলে জলের কলকল করে ছুটে চলার শব্দে মুখিরত হয় চারপাশ। অন্য সকল ঝর্ণার মত এর পানি সরাসরি উপর হতে নিচে পড়ে না। ৩০০ ফুট উচু পাহাড় হতে গড়িয়ে পড়া পানি এসে পরে পাথুরে ভূমিতে। পাহাড়ের গায়ে সিড়ির মত তৈরি হওয়া পাথুরে ধাপ গুলো অতিক্রম করে নিচে পড়ে তৈদুছড়া ঝর্ণার পানি।খাগড়াছড়িতে যে কয়টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে তৈদুছড়া তাদের মধ্যে  অন্যতম।

* নিউজিল্যান্ড পাড়া

খাগড়াছড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে পানখাইয়া পাড়ার পাশেই অবস্থিত নিউজিল্যান্ড পাড়া। পানখাইয়া পাড়া থেকে বের হয়ে পেরাছড়া গ্রামের দিকে যাওয়ার রাস্তাটাই হলো নিউজিল্যান্ড সড়ক।এটাই খাগড়াছড়ির একমাত্র সমতল ভূমি ।সড়কের দুই পাশে সবুজ শস্য ক্ষেত আর তার পিছনে  পাহাড়ের মিলনমেলা মিলে মিশে গড়ে তুলেছে এক নান্দনিক সৌন্দর্য। পাহাড় আর ধানক্ষেতের মিতালী ল্যান্ডস্ক্যাপে দেখতে নিউজিল্যান্ড এর মত। তাই স্থানীয়রা নাম দিয়েছে নিউজিল্যান্ড পাড়া।

* হাতিমাথা

হাতিমাথার সবচেয়ে আকর্ষনীয় হল স্বর্গের সিড়ি। খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নের মায়ুং কপাল পাড়ায় স্বর্গের সিঁড়ির অবস্থান। অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় অবস্থিত স্থানটি। পাহাড় ও জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে এই সিঁড়ি। এটি বেঁয়ে উঠতেই চারপাশের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। বর্তমানে  খাগড়াছড়ি একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র এটি।

ভ্রমনপ্রিয় আর প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের জন্য ঘুরতে বাঁধা নেই। আর যদি আপনি তাই হয়ে থাকেন এবং আপনার  লক্ষ যদি হয় বাংলাদেশের এই একটি পার্বত্য জেলা সম্পূর্ণ টাই দেখবেন তাহলে ঘুরে আসতে পারেন মায়াবিনী লেক ,পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠির ,হর্টিকালচার হ্যারিটেজ পার্ক,মানিকছড়ি মং রাজবাড়ী, মাতাই পুখিরি এসব স্থান থেকে।

Add a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।