তুরস্কের সাইপ্রাস আক্রমণঃ ইতিহাস ও ফলাফল

পূর্ব ভূমধয়সাগরে অবস্থিত সাইপ্রাস একটি দ্বীপদেশ। কৌশলগত অবস্থানের কারণে হাজার বছর ধরে দ্বীপটি শত্রু দ্বারা বহুবার আক্রান্ত হয়েছে। গ্রীক, রোমান, আরব, ফরাসী ও তুর্কিরা বিভিন্ন সময় এই দ্বীপের দখল নেয় ও শাসন করেছে। সর্বশেষ ১৯৭৪ সালে গ্রীস ও তুর্কি সাইপ্রাস নিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ও দ্বীপটি রাজনৈতিক, সামরিক ও জাতিগতভাবে দুইভাগে বিভক্ত হয়।

সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্রের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার, এর দক্ষিণাঞ্চলের দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করে। বাকি তৃতীয়টি হল উত্তর সাইপ্রাসের তুর্কি প্রজাতন্ত্র, যা শুধুমাত্র তুরস্ক দ্বারা স্বীকৃত।

সাইপ্রাসের বাসিন্দা আসলে কারা?

১৫৭১ সালে ভেনেশিয়ান প্রজাতন্ত্রের সাথে যুদ্ধে অটোমান সম্রাটের বিজয়ের পর গ্রীক অধুস্যিত সাইপ্রাস দ্বীপ তুর্কিদের হাতে আসে। এভাবে সাইপ্রাসে তুর্কি বসতি গড়ে ওঠে।

বর্তমানে সাইপ্রাসে ১.১ মিলিয়ন মানুষের বসবাস। যাদের প্রায় ৭৮ শতাংশ গ্রিক সাইপ্রিয়টস তাদের অধিকাংশ অর্থোডক্স খ্রিস্টান। এবং প্রায় ১৮ শতাংশ তুর্কি সাইপ্রিয়ট তাদের অধিকাংশই সুন্নি মুসলিম। মারোনাইটস, ল্যাটিন রোমান ক্যাথলিক এবং আর্মেনিয়ান এবং একটি ছোট সম্প্রদায় রোমা, বা জিপসি খ্রিস্টানদের সংখ্যালঘু ৩টি দল রয়েছে।

সাইপ্রাস কনভেনশন

১৮৭৭ থেকে ১৭৭৮ সালের রুশ-তুর্কি যুদ্ধে রাশিয়া, বুল্গেরিয়া, রোমানিয়া, গ্রীস, সার্বিয়া ও রোমানিয়ার সম্মিলিত বাহিনীর সাথে তুর্কিরা হেরে গেলে অটমান সাম্রাজ্য ইউরোপে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ১৩ই জুন থেকে ১৩ই জুলাই কংগ্রেস অভ বার্লিন বসে বলকান এলাকার ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে।

১৮৭৮ সালের ৪ঠা বৃটিশ সাম্রাজ্য ও অটমানদের মধ্যে গোপন চুক্তি হয় যেটি সাইপ্রাস কনভেনশন নামে পরিচিত। সুলতান আব্দুল হামিদ দ্বিতীয় বৃটিশদেরকে সাইপ্রাসের প্রশাসনিক দায়িত্ব প্রদান করেন যেন তারা কনভেনশন অভ বার্লিনে তুর্কিদের সমর্থন করে। এতে বৃটিশদেরকে সাইপ্রাসে সামরিক শিবির স্থাপনেরও সুযোগ দেয়া হয় যেন তারা দুর্বল হয়ে আসা অটমান সাম্রাজ্যকে রুশ আগ্রাসন থেকে রক্ষা করে।

বৃটিশদের দখল

সেই সময় ভারতে আসার সমুদ্রপথে এই দ্বীপটি বৃটিশদের জন্য একটি গুরত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি হয়ে ওঠে। ১৯০৬ সালে ফার্মাগুস্তায় নতুন সমুদ্রবন্দর চালু হলে সুয়েজ খাল নিয়ন্ত্রণের জন্য এই দ্বীপের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়।

চুক্তি অনুযায়ী সরকারী ব্যয় মেটাবার পর অতিরিক্ত রাজস্ব বৃটেন কর্তৃক সুলতানকে কর হিসেবে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই টাকাটা কখনোই তুর্কিদের দেয়া হয়নি বরং এটি জমা হত ব্যাঙ্ক অভ ইংল্যান্ডে ক্রিমিয়ান যুদ্ধের (১৮৫৩-১৮৫৬ সাল পর্যন্ত  এই যুদ্ধে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সার্ডিনিয়া ও তুরস্কের কাছে রাশিয়া হেরে যায়) সময় ইংল্যান্ডের কাছ থেকে নেয়া তুর্কির ঋণ পরিশোধের জন্য।  এই ব্যাবস্থায় তুর্কীরা ও সাইপ্রিয়টরা কেউ খুশি হয়নি। যেই ঘটনায় সাইপ্রাসের কোন রকম যোগ ছিল না তার দায় সায়প্রিয়টদের বহন করতে হচ্ছিল।

১৯০৭ সালে উইন্সটন চার্চিল সাইপ্রাস ভ্রমণের পর পার্লামেন্ট শীঘ্রই সাইপ্রাসকে ৫০,০০০ পাউন্ড স্টার্লিংয়ের স্থায়ী বার্ষিক অনুদান প্রদান করে এবং সেই অনুযায়ী প্রদেয় করও কমিয়ে দেয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তুর্কি সুলতান জার্মানীর পক্ষে যোগ দেন। ফলে ১৯১৪ সালের ৫ই নভেম্বর বৃটেন আনুষ্ঠানিকভাবে সাইপ্রাস দ্বীপের মালিকানা নিয়ে নেয়।

সাইপ্রাসে তুর্কি ট্রুপ

জাতিগত সহিংসতা

দ্বীপের সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রীক সাইপ্রিয়টরা গ্রীসের সাথে একত্রিত হতে চাইছিল যেটাকে তারা বলে এনসিস অর্থাৎ গ্রীসের সাথে মিলিত হওয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উপনিবেশগুলি যারা এ যুদ্ধে বৃটেনের পক্ষ হয়ে বিশ্বকে মুক্ত করতে লড়াই করেছিল এখন তারা নিজেদের জন্য স্বাধীনতা চাইছিল। বৃটিশরা অন্য উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতা দিলেও সাইপ্রাস তাদের জন্য অনেক বেশি মূল্যবান ছিল।

সাইপ্রাস থেকে রয়াল এয়ারফোর্স সহজেই আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপে পৌছে যেতে পারত। মধ্যপ্রাচ্য থেকে সাইপ্রাস মাত্র ১০০ মাইল দূরে, এবং সুয়েল খাল মাত্র ২০০ নটিকাল মাইল দক্ষিণে। তাই আরব ও আফ্রিকায় নিয়ন্ত্রন ধরে রাখার জন্য সাইপ্রাসের অবস্থান অনেক  গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা পূর্ণ স্বাধীনতার বদলে স্বায়ত্বশাসন দিতে চাইল।

১৯৫০ সালে আর্চবিশপ ম্যাকারিওস দি থার্ড সাইপ্রাসের নেতা হলেন, তিনিই ছিলেন এনসিসের প্রবক্তা। তুর্কি সাইপ্রিয়টরা কোনভাবেই গ্রীসের সাথে একীভূত হতে চাইত না। তাই তারা বৃটিশদের অধীনে শান্তই ছিল।

১৯৫৫ সালে গ্রীক জাতীয়তাবাদী গেরিলা সংস্থা ইওকা গঠিত হল বৃটিশদের তাড়িয়ে গ্রীসের সাথে যুক্ত হবার উদ্দেশ্যে। এ আন্দোলন জোরাল হচ্ছিল, সেই সাথে সহিংসতাও। কর্ণেল জর্জ গ্রিভাস ছিলেন এই আন্দোলনের নেতা।

ইওকা ১৯৫৫ সালের ১লা এপ্রিল দ্বীপের রাজধানী নিকোসিয়ায় সরকারি অফিসের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক বোমা হামলার মাধ্যমে অভিযান শুরু করে। এই প্রাথমিক হামলায় কেউ নিহত হয়নি কিন্তু ইওকা মূলত হত্যার অভিযান শুরু করে যার লক্ষ্য ছিল পুলিশ বাহিনীর গ্রীক সদস্য এবং যারা এনোসিসের ধারণার সাথে দ্বিমত পোষণ করে। ১৯৫৫ সালের নভেম্বরে দ্বীপের গভর্নর লর্ড হার্ডিং কর্তৃক জরুরি অবস্থা জারি করেন।  ব্রিটিশ সরকার রাজনৈতিক সমাধান খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু করে। ১৯৫৬ সালের মার্চ মাসে, ম্যাকারিওসকে সেশেলসে নির্বাসিত করা হয়, কিন্তু জরুরি অবস্থা অব্যাহত ছিল।

১৯৫৮ সালে তুর্কিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নতুন দল গঠিত হল টিওটি- তুর্কি প্রতিরক্ষা সংস্থা। তাদের উদ্দেশ্য হল রাজনৈতিকভাবে দ্বীপটিকে দুটি অঞ্চলে ভাগ করা, যার নাম টাক্সিম।

ধীরে ধীরে ব্রিটিশ কৌশলের প্রভাব পড়তে শুরু করে। ১৯৫৭ সালের মধ্যে ইওকার অধিকাংশ নেতাকে হত্যা বন্দী করা হয়। কিন্তু তারা ছাত্র এবং স্কুলছাত্রীদের দ্বারা দাঙ্গার আয়োজন করে এবং পুলিশ অফিসার, সামরিক কর্মী এবং তাদের পরিবারকে টার্গেট করার জন্য এক্সিকিউশন স্কোয়াড ব্যবহার করে। এই আক্রমণগুলি ১৯৫৮ সাল জুড়ে অব্যাহত ছিল। অবশেষে ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন শেষ  হয় যখন সাইপ্রাসের জন্য একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র হওয়ার লন্ডন চুক্তি ঘোষণা করা হয়।

সাইপ্রাস দ্বীপের বর্তমান বিভাজন

লন্ডন-জুরিখ চুক্তি ও সাইপ্রাসের স্বাধীনতা লাভ

যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা ছিল যে সাইপ্রাসে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সোভিয়েত ইউনিয়ন আগ্রাসন চালাবে। তাই তারা সাইপ্রাসের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল।

শেষ পর্যন্ত ম্যাকারিওস গ্রীসের সাথে একত্রিত হবার বদলে স্বাধীন হবার প্রস্তাব মেনে নেন।

১৯৬০ সালে লণ্ডন-জুরিখ চুক্তির অধীনে সাইপ্রাসকে স্বাধীন ঘোষণা করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী গ্রীস, তুরস্ক এবং বৃটেন সাইপ্রাসের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, ও স্বাধীনতা বজায় রাখার দায়িত্বে থাকবে এবং কোন সমস্যা হলে প্রত্যেক পক্ষেরই হস্তক্ষেপের অধিকার থাকবে। বৃটেনের দুইটি সামরিক ঘাঁটি দ্বীপে থাকবে এবং এগুলোর চারপাশের ভূখন্ড বৃটেনের মালিকানায় থাকবে। এবং সাইপ্রিয়াস অন্য কোন দেশের সাথে অন্তর্ভূক্ত হবার অধিকার রদ করা হয়।

১৯৬০ সালের ১৬ই আগস্ট সাইপ্রাসের সংবিধান পাশ হয়। সংবিধান অনুযায়ী গ্রীক সাইপ্রিয়টদের মধ্য থেকে দেশের প্রেসিডেন্ট হবেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন একজন তুর্কি সাইপ্রিয়ট। সিভিল সার্ভিসের ৭০ শতাংশ গ্রীক ও বাকি ৩০ শতাংশ তুর্কি সাইপ্রিয়ট থাকবে।

মাত্র ৩ বছরের মধ্যে ১৯৬০ সালের সংবিধান অকার্যকর প্রমাণিত হয়। ১৯৬৩ সালে ম্যাকারিওস সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব আনেন। সংশোধনীতে তুর্কি সাইপ্রিয়টরা সংখ্যালঘু হিসেবে প্রশাসনে ৩০% এর যে কোটা পেত এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের ভেটো দেয়ার ক্ষমতা রদ করা হয়। তুর্কি সাইপ্রিয়টরা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তারা সরকার থেকে পদত্যাগ করে বা তাদেরকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এতে সংবিধান অচল হয়ে যায় ও ১৯৬৩ সালের ২১শে ডিসেম্বর দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়।

দাঙ্গায় ৩৬৪ জন তুর্কি ও ১৭৪ জন গ্রীক সাইপ্রিয়ট মারা যায়। উত্তর নিকোশিয়াতে নারী ও শিশু সহ ৭০০ জন তুর্কি সাইপ্রিয়টকে জিম্মি করা হয়। তুর্কি সাইপ্রিয়টদের ১০৯টি গ্রাম ধ্বংস করা হয়। ব্রিটিশ ডেইলি টেলিগ্রাফ পরবর্তীতে একে “তুর্কি বিরোধী লুণ্ঠন” বলে আখ্যায়িত করে।

তুরস্ক, বৃটেন ও গ্রীস দ্বীপে নাটোর সেনাবাহিনী পাঠাবার প্রস্তাব করে। কিন্তু তা নাকোচ হয়ে যায়। তুরস্কের সেনাবাহিনী অতর্কিত হামলা চালিয়ে দ্বীপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিকোসিয়া- কিরেনিয়া রোড দখল করে নেয়। ন্যাটোর দুই সদস্য তুরস্ক ও গ্রীস যুদ্ধের মুখমুখি এসে দাঁড়ায়। ১৯৬৪ সালে জাতিসংঘ সাইপ্রাসের শান্তি রক্ষায় বাহিনী মোতায়েন করে।

১৯৬৭ সালে গ্রীসে ক্যু হয় ও সামরিক জান্তা ক্ষমতায় আসে। এর আগে সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট এনসিসের পক্ষে থাকলেও সামরিক জান্তার অধীনে যেতে রাজী ছিলেন না। পরবর্তী কয়েক বছরে ৫ বার তার প্রাণনাশের চেষ্টাকরা হয়। কিন্তু তিনি বেচে যান।

গ্রিক সামরিক অভ্যুত্থান এবং তুর্কির সাইপ্রাস আক্রমণ

১৯৭৪ সালে ম্যাকারিওস সাইপ্রাস ন্যাশনাল গার্ড থেকে ৬০০ জন গ্রীক সামরিক অফিসারকে সরিয়ে দেয়ার আদেশ দেন। ১৯৭৪ সালের ১৫ই জুলাই সাইপ্রিয়ট ন্যাশনাল গার্ড এর কিছু অফিসার যারা এথেন্সের অনুগত ছিল, গ্রীসের সাথে দ্বীপটিকে একত্রিত করার জন্য একটি অভ্যুত্থান চালায়। এরই মধ্যে নিকোস স্যাম্পসনকে নতুন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। স্যাম্পসন ছিলেন একজন অতি-জাতীয়তাবাদী, এনোসিসপন্থী যোদ্ধা, যিনি তুর্কি বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ম্যাকারিওস পালিয়ে লন্ডন চলে যান।

আর্চবিশপ ম্যাচারিওস

এথেন্স গ্রীসের সাথে সাইপ্রাসকে একত্রিত করার বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলতে শুরু করে। মার্কিন আলোচকের মাধ্যমে তুরস্ক গ্রিসের কাছে দাবির একটি তালিকা প্রেরণ করে। তারা বৃটেনের প্রতি গ্যারান্টার হিসেবে সাইপ্রাস বিষয়ে নিরপেক্ষতার দাবী জানায়। কিন্তু বৃটেন তা প্রত্যাখ্যান করে। সেই সময় ১,৭০,০০০ তুর্কি সাইপ্রিয়ট নিকসিয়া, ফার্মাগুস্তা, লার্নাকাও লিমাসলের ছিটমহল্গুলোতে বাস করত।

৫ দিন পর ২০শে জুলাই, তুরস্ক সামরিক অভ্যুত্থান মোকাবেলা এবং গ্রিসের সাথে একীকরণ রোধ করার প্রচেষ্টায় সাইপ্রাসের উত্তর-পূর্বে সামরিক আক্রমণ শুরু করে। সশস্ত্র সৈন্যরা উত্তর উপকূল কিরেনিয়ায় ভোরের কিছুক্ষণ আগে অবতরণ করে। তুরস্কের অপারেশন আটিলা ১ এর উদ্দেশ্য ছিল দ্বীপের উত্তরে কিরেনিয়া থেকে নিকসিয়ার কাছে তুর্কি ছিটমহল গোনেলি পর্যন্ত দখল করা। এর উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতার প্রদর্শন, যেন কূটনৈতিক আলোচনায় সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু গিনোলির কাছে তাদের প্যারাট্রুপাদের অবতরণের সময় ১২০ জনের মধ্যে ৯০ জন প্যারাট্রুপার মারা যায়। ২১ থেকে ২২ জুলাই রাতে, গ্রিক কমান্ডোদের একটি ব্যাটালিয়নকে গোপনে বিমান চলাচলে ক্রিট থেকে নিকোসিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। তারা ৫৫০ জন সৈন্য ও ২০টি ট্যাঙ্ক নিয়ে গিনোলি অবরোধ করে। তারা নিকসিয়া, ফার্মাগুস্তা, লার্নাকাও লিমাসলের ছিটমহলগুলোতে আক্রমন করে তুর্কিদের হারিয়ে দেয়। একই দিনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবন্ধের আহবান জানায়। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ যখন বন্ধ হয়, তুরস্ক কিরেনিয়া থেকে জিনওলি পর্যন্ত দ্বীপের একটি ছোট কিন্তু কৌশলগত অংশ নিয়ন্ত্রণ করে, যা নিকোসিয়ার ঠিক উত্তর – সাইপ্রাসের ভূমির প্রায় ৭ শতাংশ। ২৩শে জুলাই গ্রিক সামরিক জান্তার পতন ঘটে মূলত সাইপ্রাসের ঘটনার কারণে। নির্বাসনে থাকা গ্রীক রাজনৈতিক নেতারা দেশে ফিরে আসতে শুরু করেন।

২৪ জুলাই কনস্টান্টাইন কারামানলিস প্যারিস থেকে ফিরে আসেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

এই ঘটনায় জেনেভায় শান্তি আলোচনার জন্য একটি আশাব্যঞ্জক পরিবেশ সৃষ্টি হয়, এইভাবে সাইপ্রাসে ২৪শে জুলাই থেকে ১৩ই আগস্টের মধ্যে সামরিক তৎপরতা কম ছিল। গ্রিসের প্রত্যাবর্তনকারী প্রধানমন্ত্রী কনস্ট্যান্টিনোস কারামানলিস সাইপ্রাস ছেড়ে গ্রিসকে যুদ্ধ থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় আলোচনার শেষে তুরস্ক মনে করে সময়ের সাথে সাথে তার অবস্থান আরও দূর্বলতর হবে। সাইপ্রাসকে গ্রীক এবং তুর্কি সাইপ্রিয়টদের জন্য দুইটি অংশে ভাগ করে একটি ফেডারেল সরকারের অধীনে পরিচালনার দাবী জানায় তারা। সাইপ্রাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এথেন্স এবং গ্রিক সাইপ্রিয়ট নেতাদের সাথে পরামর্শ করার জন্য সময় চেয়েছিলেন, কিন্তু আঙ্কারা তা প্রত্যাখ্যান করে।

তুর্কি সেনা

সম্মেলন ভেঙে যাওয়ার দেড় ঘণ্টা পর, তুরান গেনেস এসিভিটকে ফোন করে অপারেশন আটিলা ২ এর কডবার্তা বলেন। যেটি ছিল “আয়শার ছুটিতে যাওয়া উচিত”।

১৪ই আগস্ট তুরস্ক তার দ্বিতীয় শান্তি অভিযান শুরু করে, যার পরিণতিতে তুর্কিরা সাইপ্রাসের ৩৭% ভূখণ্ড দখল করে নেয়। ১৮ই আগস্ট এই অভিযান শেষ হয়।

১৯৭৪ সালে সাইপ্রাসের সংঘাত সংক্ষিপ্ত এবং তুলনামূলকভাবে রক্তপাতহীন ছিল। ৮০,০০০ কম সৈন্য অংশ নিয়েছিল এবং ২০-২২ই জুলাই এবং ১৪-১৬ই আগস্ট এই ছয় দিন শুধুমাত্র উল্লেখযোগ্য লড়াই হয়েছিল, যদিও ২৩শে জুলাই থেকে ১৪ই  আগস্টের মধ্যে হালকা লড়াই্কাহয়ে। মোট হতাহতের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে কম ছিল।

১,৬০,০০০ গ্রীকসাইপ্রিয়ট দ্বীপের উত্তরাংশ থেকে দক্ষিণে গ্রীক নিয়ন্ত্রিত এলাকায় চলে যায়। সংঘর্ষের পর, সাইপ্রিয়ট প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘ তাদের ৫১,০০০ তুর্কি সাইপ্রিয়টকে দক্ষিণে তাদের বাড়ি ছেড়ে উত্তরে স্থানান্তর করে। এভাবে দ্বীপটি জাতিগতভাবে দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়।

১৯৭৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি, তুরস্ক সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্রের দখলকৃত এলাকাগুলিকে “ফেডারেটেড তুর্কি রাষ্ট্র” হিসেবে ঘোষণা করে।

Add a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।