বেঙ্গল সালতানাত : শাহী বাংলায় সুদীর্ঘ সুলতানী শাসনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : প্রথম পর্ব

১২০৪ সাল। মধ্যাহ্নভোজে বসেছেন সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেন। দুশ্চিন্তায় খাওয়ায় তার মনোযোগ নেই। উত্তর ভারতে তখন মুসলিম সেনাবাহিনীর হাতে তখন একের পর এক অঞ্চল বিজিত হচ্ছে। কখন আবার তারা বাংলা আক্রমণ করে বসে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বৃদ্ধ লক্ষণ সেন তখন ছিলেন দ্বিতীয় রাজধানী লখনৌতির রাজপ্রাসাদে যা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায় অবস্থিত। এটি সেন রাজ্যের মূল ও আদি রাজধানী পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরে (মুন্সিগঞ্জ অঞ্চল)। নদীয়ার প্রবেশপথ তেলিয়াগর্হির গিরিপথে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেও তিনি নিশ্চিন্ত হতে পারছিলেন না। হঠাৎ রাজপ্রাসাদের বাইরে হট্টগোল ও লড়ায়ের শব্দ শোনা গেলো। হামলা করেছে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি। অভিনব কৌশলে ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলের ভিতর দিয়ে মূল সেনাবাহিনী এনেছেন। তারপর ঘোড়া বিক্রেতার ছদ্মবেশে ১৭ জনের ছোট্ট অগ্রগামী বাহিনী নিয়ে বিনা বাঁধায় ক্ষিপ্র গতিতে ঢুকে পড়েছেন রাজপ্রাসাদে। অতর্কিত হামলায় ভীতবিহব্বল লক্ষণ সেন নৌকায় করে বিক্রমপুর পালিয়ে যান। নদীয়ার লখনৌতি দখল করে নেয়ার মাধ্যমে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা হয়। এদিকে প্রায় একই সময়ে স্বাধীন শাসক হিসেবে দিল্লিতে ক্ষমতায় বসেন সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক। তার প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে বখতিয়ার খলজি বাংলার সীমানা পূর্বে তিস্তা-করতোয়া নদী, দক্ষিণে পদ্মা, উত্তরে দিনাজপুর, পশ্চিমে বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত করেন।

খলজির আগমনের বহু আগে মুহাম্মদ বিন কাসিম # সালে সিন্ধু জয় করেছিলেন। তখন থেকেই ভারতবর্ষে আরব মুসলিম বণিকদের যাতায়াতের কল্যাণে বাংলা অঞ্চলে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছিল। পরবর্তীতে মুসলিম শাসকরা বাংলার ক্ষমতায় আসলে আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সুফি-দরবেশদের আগমনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তারা ইসলাম প্রচারের কাজে প্রত্যেক সুলতানের কাছ থেকেই কমবেশি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন। ফলে বর্ণপ্রথার জাতাকলে পৃষ্ঠ নিম্নবর্ণের হিন্দুরা দলে দলে মুসলমান হওয়ায় এই অঞ্চলের ইসলামের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটে। তবে শাসকদের মধ্যে সর্বদা রাজ্য বিস্তার ও নিজেদের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা পরবর্তী কয়েকশ বছর ধরে বজায় ছিল। এছাড়া ১২০৬ সালে খলজির মৃত্যুর পর ১৩৩৮ সালে ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ এর স্বাধীনতা ঘোষণার আগ পর্যন্ত বাংলার প্রশাসনিক অবস্থা ছিল খুবই গোলযোগপূর্ণ। দিল্লির মসনদের অধিনস্ত বাংলার শাসকরা সুযোগ পেলেই বিদ্রোহ করতেন। আবার দিল্লির শাসকরা তা দমন করতে অভিযান চালিয়েছেন। এজন্য বিধায় বাংলার নাম হয়ে গিয়েছিল ‘বুলগাকপুর’ বা বিদ্রোহের নগরী। ফলে বেঙ্গল সালতানাত সম্পর্কে জানতে হলে ১২০৪ সালে মুসলিম শাসকদের বাংলার মসনদ দখল ও ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশদের কাছে স্বাধীনতা হারানোর মধ্যবর্তী বিরাট সময়কালে কে কখন ক্ষমতায় ছিল তা জানা জরুরী। এজন্য বখতিয়ার খলজি পরবর্তী তৎকালীন শাসনামলের ঘটনার পরম্পরা অতি সংক্ষেপে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি।

ছবিঃ বখতিয়ার খলজির যুগের মুদ্রা।

শিরাণ খলজিঃ বখতিয়ার খলজি তার তিন সহযোদ্ধাকে তিন প্রশাসনিক অঞ্চলে দায়িত্ব দিয়ে তিব্বত দখল করতে অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু সেটি ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার পথে তিনি মারা যান। আরেক বর্ণনা মতে আরেক সহযোদ্ধা আলী মর্দান খলজির হাতে নিহত হন। এরপর ক্ষমতার দ্বন্ধ শুরু হলে আলী মর্দানকে বন্দী করে শিরাণ ক্ষমতায় বসেন।

ইওয়াজ খলজিঃ এক বছরের মাথায় শিরাণ খলজি মারা গেলে হুসামউদ্দিন ইওয়াজ খলজি ১২০৮ সালে ক্ষমতায় আসেন। এরই মধ্যে আলী মর্দান খলজি বন্দী দশা থেকে পালিয়ে দিল্লি যান। অতঃপর সুলতান কুতুবুদ্দিন আইবেকের সাহায্য পেয়ে ১২১০ সালে ফিরে আসলে ইওয়াজ খলজি বাংলার ক্ষমতা ছেড়ে দেন।

আলী মর্দান খলজিঃ আলাউদ্দিন খলজি নামে পরিচিত স্বৈরাচারী এই শাসক ক্ষমতায় বসেই প্রতিশোধ নেয়া শুরু করেন। [ উল্লেখ্য তিনি ও দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খলজি (১২৯৬-১৩১৬) ভিন্ন ব্যক্তি ] বেশ কয়েকজন আমির, উজির নিহত হওয়া ছাড়াও সাধারণ জনগণের উপর তার সেনারা অত্যাচার শুরু করে। তার দুঃশাসনে অতিষ্ঠ আমিররা বিদ্রোহ করে ১২১২ সালে তাকে হত্যা করে হুসামউদ্দিন ইওয়াজ খলজিকে পুনরায় রাজধানী লখনৌতির মসনদে বসায়।

গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজিঃ দ্বিতীয় মেয়াদে ১২১২-২৭ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করা হুসামউদ্দিন ইওয়াজ খলজি ক্ষমতার শুরুতেই ‘গিয়াসউদিন’ উপাধি নেন। এরপর তিনি বিদ্রোহ করে তিনি দিল্লির বশ্যতা অস্বীকার করেন। নৌবাহিনী সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করেন। এদিকে কুতুবউদ্দিন আইবেকের পর ক্ষমতায় আসা দিল্লির সুলতান ইলতুৎমিশের সাথে তার যুদ্ধ ও পরে সন্ধি হয়। কিন্তু কিছুদিন পরই তিনি আবারও দিল্লির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং পূর্ব বাংলার আঞ্চলিক হিন্দু রাজাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে রাজ্য বড় করেন। এই সুযোগে ইলতুৎমিশ তার পুত্র নাসিরউদ্দিন মাহমুদকে পাঠিয়ে বাংলা দখল করে নেন।

তুর্কি দাস শাসনামলঃ

১২২৭ সাল থেকে ১২৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলা একটানা দিল্লি সালতানাতের একটি প্রদেশ ছিল। এসময় যে ১৫ জন শাসক এই অঞ্চল শাসন করেন তার দশজনই ছিলেন তুর্কি মামলুক দাস। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনজন হলেনঃ

১। নাসিরউদ্দিন মাহমুদঃ সুলতান ইলতুৎমিশের পুত্র খলজি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১২২৭-২৯ সাল পর্যন্ত বাংলা শাসন করেন। তার অকাল মৃত্যু দিল্লির সিংহাসন নিয়ে লড়াইয়ের সৃষ্টি করে।

৫। তুঘরিল তুঘান খানঃ ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর তার কন্যা সুলতানা রাজিয়া মুসলিম শাসিত ভারতবর্ষের একমাত্র নারী সুলতান হিসেবে সিংহাসনে বসেন। এটি নিয়ে তার ভাই ও সৎমায়ের সাথে রাজনৈতিক গোলযোগ সৃষ্টির সুযোগ নিয়ে আওর খান আইবক বাংলার ক্ষমতা দখল করেন। তাকে পরাজিত করে সুলতানা রাজিয়ার অনুগত তুঘরিল তুঘান খান ক্ষমতায় আসেন। তিনি পঞ্চম সুলতান হিসেবে বাংলাকে একটানা ৯ বছর শাসন করেন।

১৫। মুঘিসউদ্দিন তুঘরিল খানঃ ১২৬৮ থেকে ১২৮১ পর্যন্ত স্বাধীনভাবে রাজত্ব করা এই ব্যক্তি ছিলেন বাংলার শেষ এবং শ্রেষ্ঠ তুর্কি শাসক। তখন দিল্লির ক্ষমতায় ছিল উপরে বর্ণিত নাসিরউদ্দিন মাহমুদের শ্বশুর গিয়াসউদ্দিন বলবন। দুবার মুঘিসউদ্দিনকে উৎখাতের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ১২৮১ সালে তিনি নিজেই বাংলা দখল করতে এগিয়ে আসেন। পরে ছেলে বুগরা খানকে ক্ষমতায় রেখে তিন বছর সুলতান বলবন পর দিল্লি ফিরে যান। ১২৮৭ সালে বলবন মারা যাওয়ার আগে বুগরা খানকে দিল্লির সিংহাসন দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। ফলে তার বড়ভাই যুবরাজ মুহাম্মদের পুত্র কায়খসরু দিল্লির মসনদে বসেন এবং সাথেসাথেই বুগরা খান ভাতিজার বশ্যতা অস্বীকার করে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

ছবিঃ তৎকালীন বাংলার সাথে জলপথে আন্তর্জাতিক বানিজ্য রুট

বাংলায় বলবন শাসনামলঃ

১। বুগরা খানঃ তিনি ‘সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ’ উপাধি গ্রহণ করে ১২৮৭ থেকে ১২৯১ সাল পর্যন্ত বাংলা শাসন করেন। এরই মধ্যে দিল্লির সুলতান হন তার পুত্র কায়কোবাদ। কিন্তু তার অদক্ষতা, বিলাসিতার কারণে রাজ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে বুগরা খান সেনাবাহিনী নিয়ে পুত্রের বিরুদ্ধে এগিয়ে যান। এটিই বাংলা থেকে দিল্লির বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রথম সামরিক অভিযান। শেষ পর্যন্ত পিতা-পুত্রের সন্ধি হয় যার দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়া হয়। বুগরা খান অপর পুত্র কায়কাউসের হাতে বাংলার ক্ষমতা ছেড়ে অবসরে যান।

২। কায়কাউসঃ সুলতান রুকন উদ্দিন কায়কাউস দিল্লির তরফ থেকে বাঁধা না পেয়ে বাংলার শাসন সুসংহত করেন। এসময় মুসলিম আলেম, সুফি সাধকদের বাংলায় আগমনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে ইসলাম ধর্মের সর্বোচ্চ বিস্তার হয় এবং হিন্দু-মুসলিম সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ভিন্ন মাত্রা পায়।

৩। শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহঃ ১৩০১ থেকে ১৩২২ সাল পর্যন্ত একটানা শাসন করেন সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ। এসময় বাংলায় মুসলিম রাজ্যসীমা সোনারগাঁও, ময়মনসিংহ, সিলেট পর্যন্ত বিস্তৃতি ঘটান। সুফি-দরবেশগণ ইসলাম প্রচারে নতুন নতুন এলাকায় আসতে শুরু করেন। তিনি লখনৌতি থেকে রাজধানী পাণ্ডুয়ায় স্থানান্তর করে এর নাম দেন ফিরোজাবাদ।

তার মৃত্যুর পর তার তিন ছেলের মধ্যে সিংহাসন দখলের লড়াই বাঁধে। শিহাবউদ্দিন বুগরা শাহ ও গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহ যথাক্রমে ফিরোজাবাদ ও লখনৌতি দখল করে নিলে ছোটভাই নাসির উদ্দিন ইব্রাহিম শাহ দিল্লির তৎকালীন সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের কাছে সাহায্য চান। তার সহযোগিতা পেয়ে বড়ভাই গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহ পরাজিত ও বন্দী করে দিল্লি পাঠানো হয়। দিল্লির পক্ষ থেকে পূর্ববঙ্গে তাতার খান ও পশ্চিমবঙ্গে নাসির উদ্দিন ইব্রাহিম শাহকে শাসনকাজের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে নাসিরউদ্দিনের মৃত্যুর পর রাজধানী সোনারগাঁওয়ে স্থানান্তর করার হয় এবং তাতার খান ‘বাহরাম শাহ’ উপাধি নিয়ে পুরো বাংলা শাসন শুরু করেন। ইতিমধ্যে দিল্লিতে গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের মৃত্যুর পর সিংহাসনে আসা মুহাম্মদ বিন তুঘলক বাবার আমলের রাজবন্দী গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহকে কারাগার থেকে মুক্তি দেন এবং তাতার খানের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করার সুযোগ দেন। কিন্তু তিনি সুযোগ পেয়েই বিদ্রোহ করেন। পরে ১৩৩০ সালে তাতার খান ওরফে বাহরাম শাহ এর সাথে যুদ্ধে তিনি নিহত হন।

 

শাহী বাংলার সূচনাঃ

সুতরাং পাঠক, বুঝতেই পারছেন যে, ১২০৪ সালে বখতিয়ার খলজির হাত ধরে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা হলেও এটি বেশিরভাগ সময় দিল্লি সালতানাতের অধীনে ছিল। সুযোগ পেলেই শাসকরা বিদ্রোহ করেছেন বটে। কিন্তু সেই স্বাধীনতা বেশিদিন টিকে নি। অন্যদিকে বুগরা খান সন্ধির বিনিময়ে ছেলের কাছ থেকে স্বাধীনতা পান। পূর্ববর্তী বলবনী শাসনামলে বাংলা ও দিল্লিতে কার্যত এক পরিবারের শাসন ছিল। এজন্য তৎকালীন স্বাধীন বাংলাকে ইতিহাসবিদরা স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেন না।

অবশেষে ১৩৩৮ সালে বাহরাম শাহ মারা গেলে ‘ফখরা’ নামের তার একজন উচ্চভিলাসী সিলাহদার (বর্মরক্ষক) ‘ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ’ উপাধি ধারণ করে সোনারগাঁও থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এসময় দিল্লির সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক ভারতের অন্যান্য স্থানের বিদ্রোহ দমনে মনযোগী থাকায় বাংলার দিকে নজর দিতে পারেনি। তার পূর্বসূরি গিয়াসউদ্দিন তুঘলক সোনারগাঁও, সাতগাঁও এবং লখনৌতি – এই তিনভাগে বাংলাকে ভাগ করেছিলেন। ফলে সোনারগাঁও ফখরুদ্দিনের দখলে গেলে বাকি দুই অঞ্চলের গভর্নর ইয়াজুদ্দিন ইয়াহিয়া ও কদর খান দিল্লির সুলতানের পক্ষে তাকে দমন করতে এগিয়ে আসেন। যুদ্ধে পরাজিত ফখরুদ্দিন টাঙ্গাইলের মধুপুরের জঙ্গলে পালিয়ে যান।

১। ফখরুদ্দিন মুবারক শাহঃ  ইয়াজুদ্দিন ফিরে গেলেও কদর খান সোনারগাঁও এ থেকে যান। এদিকে ফখরুদ্দিন বর্ষার অপেক্ষায় ছিলেন। পরে নিম্নাঞ্চল সোনারগাঁও কে বর্ষাকালে অবরোধ দিয়ে কদর খানের সেনাদের ঘুষ দিয়ে নিজের দলভুক্ত করেন। যুদ্ধে কদর খান নিহত হন। ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ হন স্বাধীন বাংলার প্রথম সুলতান। তার আমলে চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ হয়। পূর্ববঙ্গে ইসলামের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটে। তার আমলে মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলা ১৩৪৫-৪৬ সালে বাংলা ভ্রমণ করেন। তিনি তার বইয়ে তৎকালীন কৃষি, বানিজ্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিসহ আর্থসামাজিক অবস্থার বিবরন দিয়েছেন। পরে তিনি হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর সাথে দেখা করে চীনের উদ্দেশ্যে বাংলা ত্যাগ করেন। ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ এর শাসনামলকে বাংলার সবচেয়ে গৌরবময় যুগ বলা হয়।

 

ইলিয়াস শাহী বংশঃ

স্বাধীন বাংলার প্রথম রাজবংশ ইলিয়াস শাহী বংশ। এর প্রতিষ্ঠাতা শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের উথানের গল্প যেন কল্পনাকেও হার মানায়। তিনি কে, কোথা থেকে এসেছেন এসংক্রান্ত তেমন কোনো তথ্য তৎকালীন সময়ের ইতিহাসবেত্তারাও জানতেন না। শোনা যায় তিনি পূর্ব ইরানের অধিবাসী ছিলেন। দিল্লিতে তিনি ও তার দুধভাই আলী মুবারক দিল্লির মুহাম্মদ বিন তুঘলকের পরবর্তী সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের চাকর ছিলেন। কি এক অপরাধ করে ইলিয়াস পালিয়ে যান। ফিরোজ শাহ ভাইকে ধরে আনতে আলী মুবারককে নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হলে তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেন। আলী মুবারক পরে কদর খানের সেনাপতি হন। ফখরুদ্দিনের সাথে যুদ্ধে নিহত হলে তিনি লখনৌতির সিংহাসনে বসেন। এদিকে ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ কয়েকবার চেষ্টা করেও লখনৌতির দখল নিতে না পেরে হাল ছেড়ে দেন। অন্যদিকে তার মৃত্যুর পর সোনারগাঁওয়ে শক্তিশালী শাসকের অভাব দেখা দেয়।

১। শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহঃ

এদিকে আলী মুবারক ‘সুলতান আলাউদ্দিন আলী শাহ’ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে যখন বসে আছেন তখন ইলিয়াস শাহ দিল্লি থেকে বাংলায় আসলে তাকে পূর্বের সেই কারণে গ্রেফতার করেন। কিন্তু মায়ের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দিয়ে উচ্চ রাজপদে নিয়োগ দেন। ১৩৪২ সালে তিনি বিদ্রোহ করে দুধভাই আলী মুবারককে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন। তিনি সাতগাঁও, ত্রিহুত, নেপালের কিছু অংশ দখলে নেয়া ছাড়াও ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ এর পুত্র ইখতিয়ারউদ্দিন গাজি শাহকে পরাজিত করে পূর্ব বাংলার সোনারগাঁও দখল করেন। এর মধ্য দিয়ে পুরো বাংলা অঞ্চলকে পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে নিয়ে শাহী বংশের শাসন সুদৃঢ় করেন। এজন্য ইতিহাসবিদগণ তাকে ‘শাহ-ই-বাঙ্গালাহ’ এবং ‘সুলতান-ই-বাঙ্গালাহ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। আরবী, ফার্সির পাশাপাশি বহু আগে থেকেই বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত হত। ইলিয়াস শাহের আমলেই এ অঞ্চলের অধিবাসীদের বাঙালি নামে সর্বপ্রথম অভিহিত করা হয়। এজন্য তাকে অনেকে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের জনক’ ও বলে থাকেন।

২। সিকান্দার শাহঃ  

১৩৫৮ সালে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ এর মৃত্যুর পর তার পুত্র সিকান্দার শাহ সিংহাসনে বসেন। ইতিপূর্বে তার পিতা দুই বাংলা দখলের পর পশ্চিমে কাশি, গোরক্ষপুর, উড়িষ্যার কিছু অংশ দখল করে নিলে দিল্লির পরবর্তী সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের সাথে তার যুদ্ধ হয়েছিল। এতে তিনি বাধ্য হয়ে সন্ধি করে ফিরে গিয়েছিলেন। সিকান্দার শাহ ক্ষমতায় বসলে ১৩৬০ সালে আবারো বাংলা অভিযানে আসেন সুলতান ফিরোজ শাহ। কিন্তু তিনিও পিতার কৌশলের ন্যায় শক্তিশালী একডালা দুর্গে আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধ করেন। পরে বর্ষাকাল এসে পড়ায় ফিরোজ শাহ আবারো বাধ্য হয়ে সন্ধি ও বন্ধুত্ব করে ফিরে যান। পরবর্তী দুশো বছরের মধ্যে দিল্লির কোনো সুলতান বাংলা পুনঃদখলের চেষ্টাও করেন নি। সিকান্দার শাহের আমলে বাংলার শিক্ষাদীক্ষা, শিল্প সংস্কৃতি ও স্থাপত্যকলার ব্যাপক উন্নতি হয়। পান্ডুয়ার আদিনা মসজিদ, দিনাজপুরের মোল্লা আতার মসজিদ, পীর আখি সিরাজউদ্দিনের সমাধি, গৌড়ের কোতোয়ালি দরজা তার সময়ের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।

ছবিঃ বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পান্ডুয়ার আদিনা মসজিদ বাংলার মধ্যযুগীয় স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন।

৩। গিয়াসউদ্দিন আজম শাহঃ

১৩৯৩ সালে গিয়াসউদ্দিন তার সৎমায়ের চক্রান্তে পিতা সিকান্দার শাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও যুদ্ধ করতে বাধ্য হন। এতে সিকান্দার শাহ নিহত হলে তিনি ক্ষমতায় বসেন এবং ১৭জন সৎভাইয়ের চোখ তুলে হত্যা করেন। এভাবে তিনি প্রথমেই যাবতীয় প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মূল উৎপাটন করেন। তার রাজ্য বিস্তারের চেয়ে বিদ্যমান রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার দিকেই বেশি মনোযোগ ছিল। তিনি চীনের সম্রাট ইয়াং-লু এর কাছে রাষ্ট্রদূত প্রেরণ ও পারস্যের বিখ্যাত কবি হাফিজের সাথে পত্র যোগাযোগ হয়েছিল। তার আমলে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। শাহ মোহাম্মদ সগিরের ইউসুফ-জুলেখা কাব্যগ্রন্থ ও কৃত্তিবাসের রামায়নের বাংলা অনুবাদ তার পৃষ্ঠপোষকতায় লেখা হয়েছিল। তিনি অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ নির্মাণ, এমনকি মক্কা-মদিনায় দান করার জন্য অর্থ প্রেরণ করতেন বলে শোনা যায়। তার ন্যায় বিচারের একটি ঘটনা তো ইতিহাস বিখ্যাত। একবার এক বিধবা নারী তার পুত্রকে হত্যার অভিযোগে সুলতান গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে কাজীর আদালতে মামলা করেন। পরে কাজীর সমন পেয়ে তিনি আদালতে উপস্থিত হন এবং দোষী সাব্যস্ত হয়ে উক্ত নারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হন। তার আমলে বহু হিন্দুকে উচ্চপদে রাজ দরবারে চাকরি দেয়া হয়েছিল। সেটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ১৪০৯ সালে দিনাজপুরের ভাতুরিয়ার জমিদার রাজা গণেশের চক্রান্তে তিনি নিহত হন।

রাজা গণেশের শাসনামলঃ

গিয়াসউদ্দিনের পুত্র হামজা শাহ ক্ষমতায় বসে মাত্র দুবছর শাসন করেন। পরে শিহাবউদ্দিন নামে এক ক্রীতদাস সুলতানকে হত্যা করে। তিনি ‘বায়েজিদ শাহ’ উপাধি নিয়ে সিংহাসন দখল করার কিছুদিন পর পরে তিনিও গণেশের চক্রান্তে নিহত হন। তার পুত্র আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ সিংহাসনে বসলে ১৪১৪ সালে রাজা গণেশ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।

১। রাজা গণেশঃ

২১০ বছর মুসলিম শাসনে থাকার পর হঠাৎ করে পুরো বাংলা একজন হিন্দু রাজার অধীনে যাওয়ার বিষয়টি পুরো ভারতবর্ষের মুসলিম শাসনামলের সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা। তিনি অত্যন্ত মুসলিম বিদ্বেষী ছিলেন। ক্ষমতায় এসেই বাংলায় প্রাধান্য বিস্তার করা ইসলাম ধর্মকে সমূলে উৎপাটন করার চেষ্টা চালান। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে সুফি সাধক নূর-কুতুব-উল-আলম জৈনপুরের শাসক ইব্রাহিম শার্কির সাহায্য চান। তিনি সেনাবাহিনী পাঠালে তিনি বশ্যতা স্বীকার করে ছেলে যদুর কাছে সিংহাসন ত্যাগ করে পালিয়ে যান। যদু পরে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে জালালউদ্দিন মাহমুদ শাহ নাম ধারণ করেন। শার্কি তাকেই ক্ষমতায় রেখে পরে জৈনপুরে ফিরে গেলে রাজা গণেশ ১৪১৫ সালে এসে আবার ক্ষমতা দখল করেন। শুধু তাই নয়, পুত্র যদুকেও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনেন!! চার বছর রাজত্ব শেষে রাজা গণেশ ১৪১৮ সালে মারা যান।

২। জালালউদ্দিন মাহমুদ শাহঃ

গণেশের মৃত্যুর পর তার ছোট ছেলে মহেন্দ্র দেব উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। কিন্তু কয়েক মাসের মাথায় তিনি বড় ভাই যদুর হাতের ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি পুনরায় ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে জালালউদ্দিন মাহমুদ শাহ নামধারণ করেন। এরপর থেকে নিজেকে কথায় ও কাজে খাঁটি মুসলমান হিসেবে প্রমাণ দিতে শুরু করেন। তার আমলে অনেক মসজিদ-মাদ্রাসা স্থাপিত হয়। পিতার দ্বারা বিতারিত দরবেশ নূর-কুতুব-উল-আলমের নাতিকে রাজধানীতে সম্মানের সাথে ফিরিয়ে আনেন। তার প্রচলিত মুদ্রায় তিনি নিজেকে ‘খলিফাতুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর খলিফা’ নামে নিজেকে উল্লেখ করেন। তিনি একজন সুযোগ্য শাসক ছিলেন। ইব্রাহিম শার্কির রাজ্যের কিছু অংশ দখল করার পাশাপাশি বাংলার রাজধানী পাণ্ডুয়া থেকে গৌড়ে স্থানান্তর করেন। তিনি চীন, পারস্য, মিশর, সিরিয়ার সাথে রাষ্ট্রদূত বিনিময় করেছিলেন। ১৪৩২ সালে তার মৃত্যুর পর ছেলে শামসুদ্দিন আহমদ শাহ সুলতান হন। তিনি ১৪৪২ সালে দুই ক্রীতদাস সাদী খান ও নাসির খানের হাতে নিহত হলে রাজা গণেশ ও তার উত্তরাধিকারীদের প্রায় ৩০ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

ছবিঃ জালালউদ্দিন মাহমুদ শাহ ও তার স্ত্রী এবং ছেলে শামসুদ্দিন আহমদ শাহ এর সমাধি।

পরবর্তী ইলিয়াস শাহী বংশঃ

গণেশের উত্তরাধিকারদের দুর্বলতার সুযোগে আমিরগণ বিদ্রোহ করে ইলিয়াস শাহি বংশের উত্তরাধিকার নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহকে ১৪৪২ সালে সিংহাসনে বসানোর মধ্য দিয়ে বাংলায় ইলিয়াস শাহী বংশের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি এই বংশের চতুর্থ সুলতান। বাগেরহাটের সুফি সাধক হযরত খান জাহান আলীর সমাধিলিপি থেকে তার সুশাসনের কথা জানা যায়। রাজা গণেশের সময়ে সৃষ্ট হিন্দু-মুসলিম বৈরিতা তার শাসনামলে এসে বন্ধ হয়। আবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ জনকল্যাণমূলক কাজে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তার আমলে জ্ঞানবিজ্ঞানের অনেক প্রসার ঘটে। এজন্য তার ২৪ বছরের শাসনামলকে ‘বাংলার অগাস্টান যুগ’ বলে।

৫। রুকন উদ্দিন বরবক শাহঃ

১৪৫৯ সালে নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ এর মৃত্যুর পর তার পুত্র সিংহাসনে বসেন। তিনি পিতার মতোই যোগ্য ও বিচক্ষণ শাসক ছিলেন। তার কাছে কবি সাহিত্যিকরা বেশ সমাদর পেতেন। তিনি ৮ হাজার আবসেনিয় (হাবশি) কৃতদাশকে রাজ্যের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন যা তার বংশের শাসনের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৪৭৪ সালে আসামের কামরূপের এক হিন্দু রাজা নিলাম্বরের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার কিছুদিন পরই তিনি মারা যান।

৬। দ্বিতীয় শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহঃ

বরবক শাহের দ্বিতীয় পুত্র ১৪৭৪ থেকে ১৪৮১ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তার শাসনামলে রাজকীয় ফরমান জারি করে মদ্যপান নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া তিনি মহাভারত, শ্রীকৃষ্ণ বিজয় ইত্যাদি গ্রন্থের বাংলা অনুবাদে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। গৌড়ের কদম রসূল মসজিদ, তাঁতিপাড়া মসজিদ ও পাণ্ডুয়ার চতুষ্কোণ মসজিদ তার যুগের নিদর্শন।

৮। জালালউদ্দিন ফতেহ শাহঃ

ইউসুফ শাহের অযোগ্য পুত্র সিকান্দার শাহ ক্ষমতায় বসার তিনমাসের মাথায় ভাইয়ের হাতে উৎখাত হন। তার শাসনামলে হাবশি ক্রীতদাসদের প্রভাব অনেক বেড়ে যায়। ১৪৮৭ সালে জালালউদ্দিন তাদের প্রভাব খর্ব করার চেষ্টা করতেই এক বিদ্রোহে নিহত হন। এর মধ্য দিয়ে বাংলা ছয় বছরের জন্য হাবশিদের শাসনে চলে যায়।

ছবিঃ সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ এর সমাধি।

হাবশি দাশ শাসনামলঃ

স্বল্প সময়ের এই শাসনামল রাজনৈতিকভাবে খুবই বিশৃঙ্খলাপ্রবণ ছিল। চারজন হাবশি সুলতান এসময় ক্ষমতায় বসেছিলেন। পূর্বসূরিকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেছেন। আবার উত্তরসুরীদের ষড়যন্ত্রে নিহত হয়েছিলেন। তবে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ব্যতীত জনগণের উপর এর নেতিবাচক কোনো প্রভাব বা নির্যাতন হয়নি।

১। গিয়াসউদ্দিন বারবক শাহঃ তিনি ১৪৮৭ সালে ফতেহ শাহকে হত্যা করে ‘সুলতান শাহজাদা’ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। এ কাজে তার সাহায্যকারী মালিক আদিল ভবিষ্যতে হুমকি হয়ে উঠতে পারেন ভেবে তাকে বন্দীর জন্য কৌশলে ডেকে আনেন। তিনি ছলনা বুঝতে পেরে তাকে হত্যা করেন।

২। সাইফুদ্দিন ফিরোজ শাহঃ মালিক আব্দিল নতুন নাম নিয়ে ৩ বছর সফলভাবে শাসন করে ১৪৯০ সালে মারা যান।

৩। ক্তুবউদ্দিন মাহমুদ শাহঃ পিতার পথ ধরে সিংহাসনে বসেন। তবে বছর খানেকের মধ্যে মারা যান। পিতা-পুত্রের আমলের তেমন কোনো তথ্য ইতিহাসে পাওয়া যায় না। ধারণা করা হয় তারা উভয়েই ষড়যন্ত্রে নিহত হয়েছিলেন।

৪। শামসুদ্দিন মুজাফফর শাহঃ মালিক আব্দিলের দৌহিত্র সবচেয়ে অত্যাচারী হাবশি সুলতান হিসেবে পরিচিত। তার প্রধান উজিরের সৈয়দ হোসেনের বিদ্রোহে নিহত হওয়ার আগে ১৪৯১ সাল পর্যন্ত শাসন করে গেছেন।

ছবিঃ কোতোয়ালি গেট ছিল তৎকালীন বাংলা ও ভারতের সীমান্ত চেকপোস্ট।

 

বেঙ্গল সালতানাত : শাহী বাংলায় সুদীর্ঘ সুলতানী শাসনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : দ্বিতীয় পর্ব

 

 

No Comments

Add a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।