রাঙামাটির দর্শনীয় স্থান সমূহ এবং বিস্তারিত ট্যুর গাইড

রাঙামাটি জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্রগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি একটি পার্বত্য জেলা। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলা।প্রাচীন কালে এই জেলায় প্রচুর পরিমাণে কার্পাস তুলা পাওয়া যেত। সেই সুবাদে এই জেলার প্রাচীন নাম ছিল কার্পাস মহল। বর্তমানে রাঙামাটিকে তার প্রাকৃতিক রূপের কারণে বলা হয়ে থাকে রূপের রানী । পাহাড়, নদী এবং লেক মিলে গঠিত এই জনপদে চাকমা, মারমা ও রাকাইন সর্বপরী বাঙালি সহ মোট ১৪ টি জনগুস্টি বসবাস করে। বাংলাদেশের পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে প্রাকৃতিক সুন্দরের লীলাভূমি রাঙামাটি। রাঙামাটির মধ্যে উল্লেখ্য স্থান গুলো হল

১.কাপ্তাই হৃদ

২. ঝুলন্ত সেতু

৩. রাজবন বিহার

৪. শুভলং ঝর্ণা

৫. সাজেক ভ্যালী

৬..পলওয়েল পার্ক

৭. কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান

৮ . কংলাক পাহাড়

৯. দুমলং

১০.ধুপপানি ঝর্ণা

১১.হ্যাপি আইল্যান্ড

১২ .নোবাহিনীর পিকনিক স্পট

 এবার জেনে নেওয়া যাক পর্যটন কেন্দ্র গুলোর বিস্তারিত

*কাপ্তাই হৃদ

রাঙামাটি জেলার বুক ছিঁড়ে বয়ে চলেছে এক নৈস্বর্গিক সুন্দর্য্যের হৃদ নিয়ে কাপ্তাই উপজেলা। হ্রদের অথৈ জলরাশি আর চখ জুড়ানো সবুজের সমারহ । এগারো হাজার বর্গ কিলোমিটার এই হৃদ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ । এখানে চোখে পরে ছোট বড় পাহাড় আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা ঝর্ণা আর লেকের জলের সাথে সবুজের মিলনমেলা। হ্রদের আশেপাশে ছোট ছোট দ্বীপ ভিন্ন ভিন্ন পাখির মিলন মেলা এবং জলকেন্দ্রিক মানুষে আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে প্রতি মুহূর্ত । কৃত্রিম হলেও এই  হৃদ যেন প্রকৃতির আসল রূপের এক বাস্তব উদাহরণ । সারা বছরই কাপ্তাই ভ্রমন করা যায়। তবে এর আশেপাশে ঝর্ণার আসল রূপ দেখা যায় বর্ষায় ।

 *ঝুলন্ত ব্রিজ

ভ্রমন প্রিয় মানুষদের মোহিত করতে রাঙামাটি তে বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে একটি হল ঝুলন্ত সেতু। ঝুলন্ত সেতু কে রাঙামাটির প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এটি কাপ্তাই হৃদের মধ্যে নির্মিত। কাপ্তাই হৃদের বিচ্ছিন্ন দুই পাড়ের পাহাড়ের মধ্যে সম্পর্ক বাঁধিয়েছে এই ঝুলন্ত সেতু।

*রাজবন বিহার

বাংলাদেশে বৃহত্তম বিহার গুলোর মধ্যে একটি হল রাঙ্গামাটি তে অবস্থিত এই রাজবন বিহার।রাঙামাটির দর্শনীয় স্থান গুলোর অন্যতম আকর্ষণ এই রাজবন বিহার।রাঙামাটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিহারটি অবস্থিত হলেও শহরের যান্ত্রিক কোলাহল এখানে অনুপস্থিত। কাকচক্ষু জলে ঘেরা কাপ্তাই হ্রদ আর সবুজ বনানীর ছায়ায় অবস্থিত রাজবন বিহার। রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার লঞ্চ ঘাট থেকে জলপথে এবং স্টেডিয়ামের পাশ্ববর্তী সড়ক পথে পাঁচ মিনিটেই বিহারে পৌঁছানো যায়।

*শুভলং ঝর্ণা 

শুভলং ঝর্ণা রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলায় অবস্থিত। রাঙামাটি সদর হতে মাত্র ২৫ কিলোমিটার।

শুকনো মৌসুমে শুভলং ঝর্নায় খুব সামান্য পানি থাকে। বর্ষা মৌসুমে শুভলং ঝর্ণার জলধারা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ে কাপ্তাইয়ের জলে গিয়ে মেশে।

*সাজেক ভ্যালি

সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থল। সাজেক বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতার সাজেক ভ্যালি যেন এক প্রাকৃতিক ভূ-স্বর্গ। প্রকৃতি এখানে সকাল বিকাল রঙ বদলায়। চারপাশে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি, আর তুলোর মতো মেঘ, এরই মধ্যে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে রয়েছে নৈস্বর্গিক সাজেক ভ্যালি।

*পলওয়েল পার্ক 

কাপ্তাই হ্রদের কোল ঘেঁষে তৈরি সৃজনশীলতার ছোঁওয়ায় অন্যতম সেরা বিনোদন হিসেবে স্থান করে নিয়েছে পলওয়েল পার্ক। নৈস্বর্গিক প্রাকৃতিক দশ্য এবং মনোরম পরিবেশে সময় কাটাতে পলওয়েল পার্ক এখন বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া এখানে বিভিন্ন পিকনিক এবং সামাজিক অনুস্টানের সুযোগ রয়েছে।

*কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত একটি অন্যতম জাতীয় উদ্যান। উদ্যানটি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ৫,৪৬৪ হেক্টর বা ১৩,৫০০ একর জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে রয়েছে ৬২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৭৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং ৩৫৮ প্রজাতির পাখি ও ২২১ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে।[] উদ্ভিদের মধ্যে আছে সেগুন, জারুল, গামারিকড়ই গাছ, চাপালিশ, চম্পা, সোনালু, চালতা, চিকরাশি, শাল, শিলকড়ই, ধারমারা, গামারি, অর্জুন, আমলকি, আমড়া, বহেরা, বাজনা, বড়ই, পিটরাজ, পিটাল, বাঁশপাতা, বৈলাম, নাগেশ্বর, হিজল, উদল, উরিয়া, লোহাকাঠ ইত্যাদি।

*কংলাক পাহাড়

কংলাক পাহাড়  রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি সাজেক ভ্যালির সর্বোচ্চ চূড়া। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট।

সাজেক ভ্যালি  মূলত রুইলুই পাড়া এবং কংলাক পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। কংলাক পাহাড় থেকে লুসাই পাহাড় স্পষ্ট দেখা যায়। চারদিকে পাহাড়, সবুজ আর মেঘের অকৃত্রিম মিতালী চোখে পড়ে। সাজেক ভ্রমণরত পর্যটকদের কাছে এটি এখন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। রুইলুই পাড়া হতে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরত্বে এটি অবস্থিত; সাজেকের হ্যালিপ্যাড হতে ৩০-৪০ মিনিট ট্রেকিং করে কংলাক পাড়ায় যেতে হয়।

*দুমলং

দুমলং পর্বতশৃঙ্গ, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। বেসরকারিভাবে এটিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বলে দাবী করা হয়।

*ধুপপানি ঝর্ণা

ধুপপানি ঝর্ণা বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার একটি ঝর্ণা যা ফারুয়া ইউনিয়নের ওড়াছড়ি নামক স্থানে অবস্থিত। স্থানীয়রা দুপপানি ঝর্ণা নামেও ডেকে থাকে। স্থানীয় শব্দে ধুপ অর্থ সাদা আর পানি যুক্ত করে এটিকে সাদা পানির ঝর্ণাও বলা হয়। শুকনো মৌসুমে ধুপ পানি  ঝর্নায় খুব সামান্য পানি থাকে।বর্ষা মৌসুমে এই ঝর্ণা পানিতে পরিপূর্ণ থাকে।

*হ্যাপি আইল্যান্ড  

রাঙামাটি জেলার ভেদভেদী এলাকা সংলগ্ন কাপ্তাই হ্রদের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে । মনোরম সবুজ প্রকৃতির মাঝে ৪৫ একর জায়গা জুড়ে এই দ্বীপটি মূলত একটি ওয়াটার পার্ক । একটি বিশালাকৃতির মাছের আদলে বিনোদনের ভিন্নধর্মী আয়োজন নিয়ে গঠিত এই হ্যাপি আইল্যান্ড। এই পার্কে আছে ওয়াটার রাইড, লেক ভিউ সুইমিং পুল বোট রাইডিং ইত্যাদি। সেনা রিজিয়নের তত্ত্ববধানে থাকা আরন্যক হলিডে রিসোর্টের অধীনে পরিচালিত হ্যাপি আইল্যান্ড। বর্তমানে শিশু সহ সকল বয়সী মানুষের কাছে বিনোদনের অন্যতম স্থান হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।

Add a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।