সেলজুক সাম্রাজ্যঃ উত্থান ও পতনের ইতিহাস
সূচনাঃ সেলজুকরা মধ্য এশিয়া থেকে আগত যাযাবর গোত্র, একাদশ শতকের শুরুতে তারা ইসলাম (সুন্নি) গ্রহণ করে। সুদূর মধ্য এশিয়ার স্তেপ ভূমি থেকে এসে তারা বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। যার ফলে পূর্বের মুসলমান ও পশ্চিমের খৃষ্টান দুনিয়া রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। একইসাথে ইতিহাসে প্রথমবারের মত এশিয়া ও ইউরোপ একত্রিত হয়।
সেলজুক সাম্রাজ্য পূর্বের ইসলামী বিশ্বের রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন রাজ্যগুলোকে একত্রিত করেছিল এবং প্রথম এবং দ্বিতীয় ক্রুসেডে মূল ভূমিকা পালন করেছিল। সেলজুকরা তাদের প্রভাব ছিল এমন সময়কালে একাধিক আর্ট ফর্ম তৈরি ও সম্প্রসারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তারা সামরিকভাবে শক্তিশালী, সাংস্কৃতিকভাবে বিকশিত এবং ধর্মীয়ভাবে সহনশীল একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল।
গ্রেট সেলজুক সাম্রাজ্যটি পূর্বদিকে প্যালেস্টাইন থেকে পশ্চিমে চীনের কাশগড় পর্যন্ত এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সমসাময়িক মুসলমান রাজ্য মিশরের ফাতিমিয় খিলাফত এবং মরক্কো ও স্পেনের আলমোরাভ রাজ্য থেকে যেটা অনেক বড় ছিল।
![](https://i0.wp.com/diptoshika.com/wp-content/uploads/2021/07/seljuk-empair-1044.gif?resize=678%2C414&ssl=1)
সেলজুকদের আদিনিবাসঃ
সেলজুকরা অঘুয তুর্কি গোত্রের ২৪ টি উপগোত্রের একটি, এক সময় আজকের কাজাখস্তানে বসবাস করত। মধ্য এশিয়ার বিশাল স্তেপভূমি চাষাবাদের অনুপোযোগী। শত শত বছর ধরে এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করত অনেকগুলো যাযাবর গোত্র, যারা মেষপালন আর শিকারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। যাদের সম্পর্কে বলা হত তারা ঘোড়ার পিঠে জন্মায় ও ঘোড়ার পিঠেই মারা যায়। এই যাযাবর জীবন প্রণালীর কারণে তারা হয়ে ওঠে দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা তাদের গতিকে ব্যাবহার করত। দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে তারা তীর ধনুক দিয়ে দ্রুত আঘাত হেনে পালিয়ে যেত। তাদের এই যুদ্ধ কৌশল গতানুগতিক বিশাল সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়। সিল্ক রোডের দু’পাশের রাজ্যগুলো বাণিজ্যের জন্য লাভজনক পথগুল দখলে রাখতে এই যাযাবর গোত্রগুলোকে ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ করত।
সেলজুক নামটি (আরবিতে “আল-সালজুকিয়া”),এই পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা সেলজুক এর নাম থেকে এসেছে। সেলজুক এবং তাঁর পিতা ডুকাক খাজার রাজ্যের সামরিক কমান্ডার ছিলেন এবং সম্ভবত ইহুদি ছিলেন। ৯৬৫ সালে রুশরা খাজার রাজ্যে আক্রমণ করলে সেলজুক ও দুকাক তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। কিন্তু তারা পরাজিত হলে খাজার রাজ্যের অবসান হয়। এরপর সেলজুক ও তার বাবা ৫০০ ঘোড় সাওয়ার, ১২০০ উট, ও ৫০,০০০ ভেড়া নিয়ে সমরখন্দের দিকে রওনা হন। তারা ৯৮৬ সালে ঝান্দে এসে পৌছায়। এটি বর্তমানের কাজাখস্থানের উত্তর পশ্চিমের একটি জায়গা, যেটি সেসময় সামানিদ সাম্রাজ্যের অধীনে খোয়ারেজিমিরা শাসন করত। এখানে সেলজুক ইসলাম গ্রহণ করেন। দূর দূর থেকে অঘুয গোত্রগুলো এখানে এসে বসতি গড়ে ও ইসলাম গ্রহণ করে। এতে সেলজুকদের ক্ষমতা বাড়তে থাকে। ৯৯৯ সালে কারাখানিদেরা সামানিদদের পরাজিত করে।
১০০৯ সালে ১০৭ বছর বয়সে সেলজুক মারা গেলে তার বড় ছেলে আরসলান ইসরাইল গোত্রের নেতা হন। তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গজনীর সুলতান মাহমুদ আরসলানকে গ্রেফতারের আদেশ জারি করেন। আরসলান গ্রেফতার হলে গোত্রটি দু’দলে ভাগ হয়ে একদল যারা নিজেদের ইরাকিয়া বলত পশ্চিমে তারা আজারবাইজান ও পূর্ব আনাতোলিয়ার দিকে চলে যায় ও সেলজুক রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে। বড় অংশ সেখানেই রয়ে যায়। তাদের মধ্যে তখন দলের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। কারাকানিদ প্রিন্স আলী তেগিনের কাছে সেলজুকরা যুদ্ধে হেরে খোরাসানের দিকে রওনা দেয়। এসময়ে গোত্রের নেতা তুঘ্রিল ও চাগ্রিল বেগ, আরসলানের ভাই মিকাইলের দুই ছেলে।
![](https://i0.wp.com/diptoshika.com/wp-content/uploads/2021/07/seljuk-offensive.jpg?resize=678%2C449&ssl=1)
তুঘ্রিল বেগঃ
খোরাসান সেই সময় গজনবী রাজ্যে অত্যন্ত গুরুতপূর্ণ প্রদেশ। ১০৩৫ সালে সেলজুকরা মাসুদের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে খোরাসান দখল করে নেয়। ১০৩৮ সাল নাগাদ মারভ ও নিশাপুর শহর সেলজুকদের দখলে আসে। পরবর্তী দুই বছর মাসুদের বাহিনীর সাথে সেলজুকদের যুদ্ধ চলতে থাকে। ১০৪০ সালে মার্ভের কাছে দানদানিকানে চূড়ান্ত লড়াই হয়। গজনবীদের কাছে হস্তীবাহিনী এবং মামলুক দাসদের পদাতিক দিয়ে সুসজ্জিত বিশাল বাহিনী ছিল। সেলজুকরা হাল্কা অস্ত্র ও দ্রুতগামী ঘোড়া নিয়ে তাদের চাইতে কয়েকগুণ বড় ও শক্তিশালী গজনবী বাহিনীকে হারিয়ে দেয়। তুঘ্রিল নিজেকে সুলতান ঘোষণা করেন ও স্বাধীন সেলজুক সাম্রাজ্যের সূচনা হয়।
চাগ্রিল মার্ভে থেকে সিস্তান এলাকায় হামলা জারি রাখেন।
আর তুঘ্রিল ইরানের দিকে যাত্রা করেন। সেসময় ইরাক ও ইরানের বেশিরভাগ এলাকা শিয়া বুয়িদরা শাসন করত। ১০৪১ থেকে ১০৪৪ সাল পর্যন্ত তিনি ইরানের অনেক এলাকা দখল করেন। তিনি সুলতানের ও বাগদাদের খলফার নামাঙ্কিত মুদ্রা চালু করেন। বাণিজ্য পথের পাশে দুর্গ তৈরী করেন ব্যাবসায়ীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য। বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফা শিয়া বুয়িদদের হাত থেকে বাগদাদকে রক্ষার জন্য তুঘ্রিলের সাহায্য কামনা করেন। ১০৫৫ সালের জানুয়ারিতে তুঘ্রিল বাগদাদে প্রবেশ করেন ও বুয়াহিদদেরকে পরাজিত করেন। এরপর তুঘ্রিল ফাতিমি ও বাইজেনটাইনদের অনেকটা এলাকা দখল করে নেন। তুঘ্রিল এর সাথে খলিফার মেয়ের বিয়ে হয়।
![](https://i0.wp.com/diptoshika.com/wp-content/uploads/2021/07/battle-of-dandikhan.jpg?resize=678%2C493&ssl=1)
আল্প আরসালানঃ
১০৬৩ সালে তুঘ্রিলের মৃত্যুর পর তার কোন ছেলে না থাকায় সুলতান হন চাগ্রিলের ছেলে আল্প আরসালান। তিনি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে হামলা শুরু করেন। রোমান সাম্রাজ্যের পূর্ব অংশকে বাইজেন্টাইন বলা হত। ১০৬৪ সালে তিনি জর্জিয়া ও আর্মেনিয়া দখল করেন। ১০৬৫ সালের শেষে এসে সুলতান পূর্বে রাজ্যবিস্তার শুরু করেন। চেক ও তুর্কমানরা পরাজিত হয় ও ট্রেড রুটে সেলজুকদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিনি ককেশাস থেকে সিরিয়া পর্যন্ত দুর্গ তৈরী করেন। ১০৬৭ সালে আয়ন্টিওকিয়া, মিলেতেন ও সিসেরা দখলে আসে। সম্রাট রোমানভ সেলজুকদের রুখতে বিশাল বাহিনী গড়তে আরম্ভ করেন। সেই সময় আল্প আরসলান সিরিয়াতে ফাতিমিয় খলিফার সাথে লড়ছিলেন। সুলতান জানতে পারেন যে বাইজেন্টাইনদের একটি বিশাল বাহিনী মানযিকারতের দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু আল্প আরসলান আলেপ্পোর অবরোধ ছেড়ে দ্রুত লেক ভানের পূর্ব পাশ দিয়ে ইরানের দিকে রওনা হন। সম্রাট রোমানভ ৩০০০০ সেনার একটি বাহিনীকে লেক ভানের পশ্চিম তীরে সিরিয়ার সীমান্তে প্রেরণ করেন, যেদিক থেকে তিনি সুলতানের আক্রমণ আশা করছিলেন। আল্প আরসলান ১০০০০ সেনা নিয়ে দ্রুত গতিকে কাজে লাগিয়ে লেক ভান ঘুরে আলাতে সেই ৩০,০০০ সেনার উপর হামলা চালান। সম্পুর্ণ উল্টোদিক থেকে আক্রান্ত হয়ে সম্রাটের বাহিনী মধ্য আনাতোলিয়ার দিকে রওনা দেয়। সম্রাট মানযিকারত দখল করে আলাতের দিকে আগিয়ে আসেন। ২৫শে আগস্ট দুই বাহিনী মুখোমুখি হয়। পরদিন সন্ধ্যার মধ্যে সম্রাটের ৫০০০০ সেনাবাহিনীর পতন হয়। এর কিছুদিন পর আল্প আরসলান এক যুদ্ধবন্দীর হাতে নিহত হন।
![](https://i2.wp.com/diptoshika.com/wp-content/uploads/2021/07/battle-of-manjikat.jpg?resize=678%2C452&ssl=1)
মালিক শাহ প্রথমঃ
আরসলানের পর তার ছেলে মালিক শাহ সুলতান হলেন। তিনি সফলতার সাথে আভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ক্ষমতার লড়াই নিয়ন্ত্রণে আনেন। গজনবীদের হামলাও প্রতিরোধ করেন। মালিক শাহ ও তার দুইজন উজির নিজাম উল মূলক এবং তাজ উল মূলকের অধীনে সেলজুক সাম্রাজ্য চতুর্দিকে বিস্তার লাভ করে। তারা সমগ্র ইরান, ইরাক, আরব, সিরিয়া, ফিলিস্তিন এবং আনাতোলিয়া দখলে আনে। কায়রোর ফাতেমীয় খিলাফতকেও তারা কোণঠাসা করে ফেলে।
![](https://i1.wp.com/diptoshika.com/wp-content/uploads/2021/07/al-nijamia-univercity.jpg?resize=678%2C448&ssl=1)
এক কথায় সুলতান মালিক শাহের সময় সেলজুক সাম্রাজ্য সবচেয়ে বড় ছিল এবং সমৃদ্ধির চূড়ায় পৌছায়। তিনি রাজধানী রে থেকে ইস্ফাহানে নিয়ে আসেন। তিনি ইক্তা সামরিক পদ্ধতি চালু করেন। বাগদাদের নিযামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তার সময় প্রতিষ্ঠিত। সেই সময় এটিই উচ্চশিক্ষার জন্য সর্ববৃহত বিশ্ববিদ্যালয়।বাগদাদের খলিফা তাকে পূর্ব ও পশ্চিমের সুলতান উপাধি দেন। ১০৯২ সালে একই বছর উযির নিযাম উল মূলক আসাসিনের ছুরির আঘাতে মারা যান। কিছুদিন পর মালিক শাহের রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
![](https://i2.wp.com/diptoshika.com/wp-content/uploads/2021/07/malik-sha-coin.jpg?resize=325%2C160&ssl=1)
আহমেদ সাঞ্জারঃ
মালিক শাহের মৃত্যুর পর তার তার ৪ ছেলে বার্কিয়ারুক, মাহমুদ-১, মালিক শাহ-২, আহমেদ সাঞ্জার এবং ১ ভাতিজা মুহাম্মদ তাপার আলাদা আলাদা এলাকা দখলে নিয়ে নিজেদের সুলতান ঘোষণা করে। ১০৯৬ সালে আহমেদ সাঞ্জারকে তার ভাই মাহমুদ-১ খোরাসানের গভর্নর করে পাঠান। পরবর্তি কয়েক বছরে আহমেদ সাঞ্জার পুরো ইরানের শাসক হন। ১১১৮ সালে তিনি সমগ্র সেলজুক সাম্রাজ্যের শাসক হন। তিনি বর্তমান তুর্ক্মেনিস্তানের মার্ভ থেকে তার রাজ্য পরিচালনা করতেন।
১১৪১ সালে সাঞ্জার কারা খানিদদের আক্রমণ রুখতে অভিযান চালান। সামারখন্দের কাছে কাতওয়ানের যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি জীবনে প্রথম পরাজিত হন। এর ফলে সেলজুক সাম্রাজ্য সির দরিয়ার পূর্বে সমগ্র ভূখন্ড হারায় যেটা ছিল অত্যন্ত উর্বর এলাকা।
তার এবং সেলজুক সাম্রাজ্যের দুর্দিনের এখানেই শুরু। এই যুদ্ধের সময়ে তিনি তার নিজ গোত্রের হাতে বন্দি হন। সাম্রাজ্যে গোলযোগ শুরু হয়ে যায়। ১১৫৬ সালে তিনি পালিয়ে মারভে চলে আসেন। এখানে ১১৫৭ সালে তার মৃত্যু হয়।
![](https://i1.wp.com/diptoshika.com/wp-content/uploads/2021/07/tomb-of-ahmed-samber.jpg?resize=678%2C509&ssl=1)
ক্রুসেডার ও খৃষ্টানদের সাথে লড়াইঃ
আনাতোলিয়ার শহরগুলোকে সেলজুকদের দখল ফিরে পাবার জন্য কন্সটানঅটিনোপলসের বাইজেনটিন রাজারা পশ্চিম ইউরোপের রাজাদের সাহায্য কামনা করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। রোমের পোপ আরবান-২ পশ্চিমের নাইটদেরকে ধর্মযুদ্ধে যোগ দেয়ার আহবান জানান। সেলজুকরা ১০৯৬ সালে জনতার ক্রুসেডকে সহজেই রুখে দেয়। কিন্তু প্রিন্সেস ক্রুসেডাররা ইযনিক, কোনিয়া, কায়সারি ও আন্তিওক দখল করে নেয়। ১০৯৯ সালে তারা প্রতিশ্রুত ভূমি জেরুজালেম দখল করে ও ক্রুসেডারস রাজ্য কায়েম করে। পরবর্তী ১০০ বছর উভয় পক্ষ দখল পাল্টা দখল চালিয়ে যায়। খৃষ্টানরা আর কখনো আনাতোলিয়ার দখল ফিরে পায়নি।
সামাজিক পরিবর্তনঃ
সেলজুক সাম্রাজ্য পূর্ব ও পশ্চিমের সামাজিক জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে। আনাতোলিয়া ৮০০ বছর ধরে খৃষ্টান রাজ্য ছিল, তার আগে ১৫০০ বছর ধরে হেলেনিস্টিক ছিল। কিন্তু সেলজুকদের অধীনে এটি ধর্মীয় দিক দিয়ে ইসলামিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে প্রাচ্যের প্রাভাবে আসে। সেলজুকরা সামরিক দিক দেখশোনা করত। দেশের রাজনীতি, আইন ও ধর্মীয় বিষয় দেখাশোনার জন্য তারা পার্সী ও আরবদের নিয়োগ করত।
পূর্বে এ রাজ্যের রাজধানী ছিল মার্ভ ও পশ্চিমে বিভিন্ন সময় রে, ইস্ফাহান, বাগদাদ ও হামাদান। সেলজুকদের শহরগুলোর কেন্দ্রে থাকত একটি মাদ্রাসা, যেগুলো আজকের দিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য। এই সাম্রাজ্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র ওমর খৈয়াম ও ইমাম গাজ্জালী। সুফিবাদী কবি জালালুদ্দীন রুমি আনাতোলিয়ার সেলজুক রাজধানী কোনিয়ায় বসবাস করতেন। সেলজুকদের সময় চার্চ ও সিনাগগ এর সংখ্যা বেড়ে যায়, যেটি তাদের ধর্মীয় সহনশীলতার উদাহরণ। তাদের সময় নির্মিত অসাধারণ স্থাপত্যের নিদর্শন সরাইখানা, মসজিদ, মাজার ও মাদ্রাসাগুলো এখনো বর্তমান তুরস্কের থিওদোপলিস, কনিয়া, সেসেরা এবং তুর্কমেনিস্তানের মার্ভে গেলে দেখা যাবে।
![](https://i1.wp.com/diptoshika.com/wp-content/uploads/2021/07/isfahan-jame-mosjid.jpg?resize=678%2C449&ssl=1)
পতনঃ দ্বিতীয় ক্রুসেডের পর থেকে সেলজুক সাম্রাজ্য টুকরো হয়ে ভেঙ্গে পড়তে লাগল। খুব অল্প দিনের জন্য তুঘ্রিল-৩ আনাতোলিয়া ছাড়া সমগ্র সাম্রাজ্যের সুলতান ছিলেন। খোয়ারেজিমি সাম্রাজ্যের শাহ তেকিশের কাছে তিনি পরাজিত হন ১১৯৪ সালে। পুরো সেলজুক সাম্রাজ্য ধসে পড়ল। শুধুমাত্র আনাতোলিয়ার সালতানাত অফ রুম তাদের হাতে ছিল।
১২৬০ সালে মোঙ্গলরা আনাতোলিয়া দখল করে ও ছোট ছোট বেয়লিকে ভাগ করে দেয়। এই ছোট বেয়লিকের একটি অটোমান পরবর্তীতে এবং শক্তিশালী অটোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।
১৩০০ শতকের প্রারম্ভে সেলজুক সাম্রাজ্যের পতন হলেও তাদের সংস্কৃতির প্রভাব মুসলিম বিশ্বে আজ বিদ্যমান। অটোমান সাম্রাজ্য ও আজকের তুরস্ক তাদের কাছে ভয়ানক ঋনী।